গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি দেশে অরাজকতা হতে পারে: এফবিসিসিআই
করোনা মহামারি আর ইউক্রেইন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে সংকট তৈরি করেছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়লে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে জনজীবনের ওপর। এটা চলতে থাকলে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
তাই গ্যাসও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে আপত্তি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই)।
শরিবার (২১ মে) রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এই আপত্তি করা হয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বৈশ্বিক অন্তরীণ পরিস্থিতিতে চরম অসময় যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সময় এটা নয়। যে চেষ্টা হচ্ছে, সেটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। সময় থাকতে সরকারকে তা বুঝতে হবে। কারণ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়লে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে জনজীবনের ওপর। এটা চলতে থাকলে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’
এরপরও দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে ব্যবসায়ীদের উপর না চাপিয়ে বিদ্যুৎ খাতের তহবিল থেকে ভর্তুকির মাধ্যমে সমন্বয় করা দরকার, যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন,‘বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি না করে এখন সরকারের উচিত হবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের আমূল সংস্কার আনা। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। বিদ্যুতের অতিরিক্ত উৎপাদন বন্ধ করে অহেতুক খরচ কমিয়ে আনা। এর জন্য ব্যবসায়ীরা সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘এই দুঃসময়ে পাইকারি পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বহুমাত্রিক মূল্যস্ফীতি উস্কে দিবে। এর বহুমুখী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়বে দেশে। এর ফলে কৃষি শিল্প সেবা এবং সার্বিকভাবে সাধারণের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি করবে। সর্বোপরি অর্থনৈতিক উন্নয়নের চলমান ধারা মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ‘এসডিজি ৭ অনুযায়ী ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ এবং জনগণের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সবার জন্য সুলভ উন্নত নিরবিচ্ছিন্ন এবং টেকসই জ্বালানি ও বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। কিন্তু জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বার্ক) আইনের বিধান অনুযায়ী স্বচ্ছতা, মানসম্মত দক্ষতা ও জবাবদিহিতা সহকারে সুচারুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘এই খাতে সর্বত্র অদক্ষতা, যথেচ্ছ অনিয়ম, অস্বচ্ছতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং আইনের বিপরীতে পরিচালিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সমগ্র বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার না করে এ খাতে বিরাজমান অব্যবস্থাপনার অহেতুক দায়ভার জাতীয় অর্থনীতি এবং জনগণের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের সকল ক্ষেত্রে সংক্রমিত করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না।’
বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘দেশে এখন ডলার সংকট চলছে। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। এখন যদি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়, উৎপাদন খরচ বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে ভোক্তার ওপর। এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সময় নয়।’
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে আমরা রপ্তানিতে বেশ ভালো করতে ছিলাম। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে রপ্তানিকারকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এতে বিশ্ববাজারে রপ্তানি প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বে দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
জেডএ/এমএমএ/