জনবান্ধব বাজেট প্রণয়ন চায় সিপিডি
করোনায় অনেক কিছু পাল্টে গেছে। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আগামী অর্থবছরে (২০২২-২৩) নিম্নআয়ের মানুষকে গুরুত্ব দিয়ে জনবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করার সুপারিশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে সিপিডির সুপারিশ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘কৃষি খাতে ভর্তুকি আরও বাড়াতে হবে। প্রবাসীদের জন্য প্রণোদনা চালিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্যের কর বাড়াতে হবে। রাজস্ব আহরণে কর কাঠামোর পুনঃবিন্যাস করতে হবে।’
ফাহমিদা বলেন, ‘অন্যান্য বছর যাই হোক, গত দুই বছরে কোভিডে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। তাই বড় বড় লক্ষ্যমাত্রা না ধরে আগামী বাজেটে আয়-ব্যয়ে বাস্তব সম্মত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। করোনায় নিম্ন আয়ের মানুষ অনেক বেড়ে গেছে। তাদের দিকে তাকিয়ে আগামী বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টনি আরও বাড়াতে হবে। করোনায় শিক্ষার্থীরা আবদ্ধ থাকায় পুষ্টিহীনতা ভুগতে পারে। তাই শিশুদের শারিরিক ও মানসিক বিকাশে স্কুলে টিফিনের আওতা বাড়াতে হবে।’
সিপিডি বলছে, রপ্তানি আয় বাড়াতে প্রণোদনাও চালিয়ে যেতে হবে। যাতে রপ্তানি আয়ে ভাটা না পড়ে। কর কাঠামোর পুনঃবিন্যাস করা দরকার। কারণ, যারা কর দেয় তাদের অংশদারিত্ব সুযোগ দিতে হবে। তারা যেন জানতে পারে কিভাবে, কত টাকা কর দেওয়া হলো। জাতীয় রাজস্ব রোর্ডের দক্ষতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে উচ্চ বিলাসী প্রকল্প ব্যয় বন্ধ করতে হবে।
ফাহমিদা আরও বলেন, ‘কিছুদিন থেকে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ বলা হলেও বাস্তবে বহুগুণ বেশি। এর ফলে আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলছে না। অপরদিকে নিম্ন আয়ের মানুষ অনেক বেকার হয়েছে। তারপরও সঠিক তথ্য না থাকায় সরকারও সঠিকভাবে তাদের সহায়তার হাত বাড়াতে পারছে না। তাই আগামী বাজেটে সরকারকে নিম্ন আয়ের মানুষের দিকে নজর দিতে হবে। সরাসরি নগদ সহায়তা বাড়াতে হবে।’
একই সঙ্গে খোলা বাজারে বিক্রির (ওএমএস) পরিমাণও বাড়াতে হবে। আগামী বাজেটে কৃষকদের অতিরিক্ত ভর্তুকি ও ঋণ সহায়তা দিতে হবে। কৃষকরা ভর্তুকি পাচ্ছে কি না তা তদারকি করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে খাদ্য মজুদের পরিমাণ বাড়াতে খাদ্যে ভর্তুকি দিতে হবে।
শ্রমিকদের স্বাস্থ্য বীমা করারও উদ্যোগ নিতে হবে আগামী বাজেটে। মৃত ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বার্থে তাদের আরও সহায়তা দিতে হবে। পরিবেশ দূষণ করে এমন জ্বালানী থেকে বেরিয়ে এসে সবুজ নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে নজর দিতে হবে।
বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তাখাতে ১৪৩টি কর্মসূচি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সিপিডির মতে, উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতেও বরাদ্দ বাড়াতে হবে। করোনার ধকল সামলাতে এসব তিনটি ভাগ করে এক সঙ্গে করা দরকার। শিশু, নারী-পুরুষ ও বয়স্ক নারী-পুরুষ। এটা কার্যকর করদে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। শিশুদের সুরক্ষায় বিশেষ করে পুষ্টির কথা বিবেচনা করে আরও মনোযোগি হতে হবে। কারণ, তারাই জাতি গঠন করে। সঠিকভাবে তালিকা করে স্কুলে টিফিনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তোফিকুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
জেডএ/এমএমএ/