এসএমই মেলার শেষ দিনে দর্শনার্থীদের ভিড়
বিক্রিটা বড় কথা নয়। প্রচারই আসল উদ্দেশ্য। বিদেশি ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়তেই মেলায় আসা। ভালোই সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। প্রতিটি নকশিকাঁথা দেড় হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবেই ‘নবম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা’র রোবার চাপাই নকশী স্টলে ওবাইদুল ইসলাম অভিমত প্রকাশ করেন।
শুধু এই উদ্যোক্তাই নয়, সারা দেশ থেকে মেলায় অসংখ্য উদ্যোক্তারা দেশীয় তৈরি পাটজাত পণ্য, পোশাক, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যার, চামড়াজাত সামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ পণ্যসহ নানা পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রি করতে অংশ নেন আট দিনব্যাপী মেলায়। ক্রেতারাও করোনাকালে এই মেলায় আসেন।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৫ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালী এ মেলার উদ্বোধন করেন। মেলার আয়োজক ছিলো শিল্পমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এসএমই ফাউন্ডেশন। ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা” পুরস্কারপ্রাপ্ত উদ্যোক্তাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেওয়া হয় মেলায়।
তবে অন্য বছরের তুলনাই খুবই ভিড় দেখা না গেলেও করোনাকালে এবারও শেষ দিনে ভিড় দেখা যায়। করোনাকালে এই মেলাই অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ও অঞ্চলের উদ্যোক্তারা এসেছেন মেলায়। প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তাদের সাথে বিভিন্ন প্রান্তিক জনপদের উদ্যোক্তারাও অংশগ্রহণ করেন। প্রথমবারের মতো এতে ১০টি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জসহ (ডিএসই) স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারের মেলায় প্রায় ৩২৫টি স্টল অংশ নেয়।
এসএমই খাতকে চাঙ্গা করতেই এসএমই ফাউন্ডেশন এই উদ্যোগ নিয়েছে। তারমধ্যে নারী উদ্যোক্তাদেরই বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এ জন্য মেলায় বিভিন্ন স্টলে নারী উদ্যোক্তাদেরও উপস্থিতি বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন এলাকার নিজস্ব সংস্কৃতিভিত্তিক পোশাকেরও সম্ভার দেখা যায় বিভিন্ন স্টলে। নিজের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে রাঙামাটি থেকে এসেছেন ক্যালি চাকমা। মেলায় দেখা যায় জান্নাতুল ফেরদৌস নামে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক নারী উদ্যোক্তা। তিনি এসেছেন বগুড়া থেকে। মেলায় প্রথমবারের মতো আসা এই নারী নিজের ভালো লাগার কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমি এই মেলায় প্রথম এসেছি। শারীরিক সমস্যাকে ডিঙিয়ে এই জায়গায় আসতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে। ভালোই সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
চাপাই নকশী স্টলে ওবাইদুল ইসলাম বলেন,‘ বিক্রিটা বড় কথা নয়, বিদেশি ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়তেই মেলায় আসা। ভালই অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। চাঁপাই নবাবগঞ্জের রানিহাটির নয়ালাভাঙ্গা গ্রামে কারখানা ও শো-রুম রয়েছে। প্রায় সাড়ে চার হাজার লোক কাজ করছে। আমার মেয়ে এর উদ্যোক্তা, সরকারি চাকুরিও করে। তিনি আরও বলেন, একটা নিয়ে যে দাম একশটা নিলেওে একই দাম। কোয়ালিটি (মান) ঠিক রেখে সব নকশী কাঁথা বিক্রি করা হচ্ছে। বিছানার চাদরও বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।’
জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং স্টলে সানোয়ার জানান, ‘কয়েক বছর থেকে এই মেলায় অংশ নেয়া হচ্ছে। বীজ বপনসহ কৃষিপণ্যের বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ে হাজির হই। মানুষকে আর কষ্ট করতে হয় না, আমাদের যন্ত্র নিয়েই আরামে ফসল উৎপাদন থেকে ফসল কাটার সুযোগ হচ্ছে আমাদের যন্ত্রের মাধ্যমে।’
এসএমই ফাউন্ডেশনের সরকারি মহাব্যবস্থাপনক মো. মোরশেদ আলম ঢাকাপ্রকাশকে জানান, করোনাকালে মেলায় ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। সারা দেশের উদ্যোক্তাদের পণ্যের সমাহার সবার কাছে তুলে ধরার সুযোগ হয়েছে এ মেলায়। অন্য বছরের তুলনাই দর্শনার্থীদের আগমন ও বিক্রিও বেশি হবে। তবে সঠিক হিসাব এ মুহুর্তে বলা যাবে না। তিনি আরও বলেন, ২০১২ সালে প্রথম এসএমই মেলার আয়োজন করা হয়। তাতে ১০০টি স্টল অংশ নেয়। তা বাড়তে বাড়তে এবার ৩২৫টি হয়েছে। এসব মেলায় দুই হাজার ১৮৮ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি ও অর্ডার হয়েছে তিন হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।
জেডএ/জেডএকে