এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে রেমিট্যান্স ৯৭ হাজার কোটি টাকা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীরা শুধু বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমেই নয়, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য গড়ে উঠা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং অনুমোদন পাওয়ার পর গত জুন পর্যন্ত প্রবাসীরা ৯৭ হাজার কোটি টাকার বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকা। করোনকালেও গত এক বছরে পাঠিয়েছেন ২৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। ৯৭ শতাংশ রেমিট্যান্স এসেছে পাঁচটি ব্যাংকের মাধ্যমে।
বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে আমানত জমা হয়েছে ২৮ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। যা এক বছর আগে ছিল ২০ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, ঋণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে এসব এজেন্টের মাধ্যমে। এ পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ে ঋণ দেওয়া হয়েছিল ৩ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শহরে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার সুযোগ থাকলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তেমন ব্যাংকিং সুবিধা ছিল না এক সময়ে। তাই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সময়ে নজর দেওয়া হয় কীভাবে সবাইকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যায়। তা আমলে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে ব্যাংকিং সুবিধায় আনতে বিভিন্ন ব্যাংককে অনুমোদন দেয়। সে সময়ে শহরের ব্যাংক সেবা গ্রামাঞ্চলে কল্পনা মনে হলেও এক দশকে পাল্টে গেছে চিত্র।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গ্রামীণ পর্যায়ের যেসব মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিল এর মাধ্যমে অনেক মানুষ ব্যাংক সেবার আওতায় এসেছে। এ ছাড়া কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেই ধারাবাহিকতা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। যার ফলে দিনদিন বেড়ে চলছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রসার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংকসহ ৩০টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে টাকা। ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব ব্যাংকের ১৪ হাজার ২৯৯টি এজেন্টের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার আউটলেট গড়ে উঠেছে। তাদের হিসাব নম্বর এক কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে। এক বছর আগে এটা ছিল এক কোটি ২২ লাখের বেশি। বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩৯ লাখ হিসাব নম্বর। এসব হিসাবে প্রবাসীরাও প্রিয় মানুষের কাছে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৯ লাখ ৭০ হাজার ৪৮২ মিলিয়ন বা ৯৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। যা গত বছরের জুন পর্যন্ত ছিল ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪০ মিলিয়ন বা ৬৭ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। এক বছরে বেড়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকার বেশি।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, প্রবাসীরা তাদের প্রিয় মানুষের কাছে বিভিন্ন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৯৭ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৮৮ হাজার ২৮ কোটি টাকার বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। আর শহরে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ হাজার ২০ কোটি টাকা।
৩০টি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৫১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। যা মোট রেমিট্যান্সের ৫৩ শতাংশ। এরমধ্যে প্রত্যন্ত অঞলে ৪৮ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা ও শহরে ২ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। ডাচবাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ২৩ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। যা মোট রেমিট্যান্সের ২৫ শতাংশ। এরমধ্যে গ্রামাঞ্চলে ১৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা ও ৪ হাজার ৮৮ কোটি টাকা শহরে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্যাংক এশিয়ার ১০ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। যা মোট রেমিট্যান্সের ১১ শতাংশ। প্রবাসীরা গ্রামাঞ্চলে ৯ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা ও শহরে ৭৭৭ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন। চতুর্থ স্থানে রয়েছে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৪ হাজার ৮৪৭ টাকা শহরে ৩১১ কোটি টাকা। আর অগ্রণী ব্যাংকের দুয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৩ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা ও শহরে ৭৪ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
জেডএ/এসএন