স্বর্ণ পাচারের ‘গোল্ডেন রুটে’ পরিণত হচ্ছে খুলনা
ছবি: সংগৃহীত
স্বর্ণ পাচারের ‘গোল্ডেন রুটে’ পরিণত হচ্ছে খুলনা। ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণ পাচার হচ্ছে ভারতে। মাঝে মধ্যে দু-একটি চালান ও স্বর্ণের বাহকরা আটক হলেও, ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন মূল হোতারা। অভিযোগ রয়েছে, এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যও।
সূত্র বলছে, পাচারকারীরা বিভিন্ন কৌশলে স্বর্ণ পাচার করছে। স্বর্ণের বার বহনকারীরা ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে যাত্রীবাহী বাসে যাতায়াত করেন। দুবাই থেকে আনা স্বর্ণ ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে পাচার হয় ভারতে। এক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ বার হাতবদল হয়। ফলে বেশিরভাগ সময়ই বহনকারীরা মূল হোতাকে দেখেনও না।
মার্চ মাসের ২০ তারিখ। ঠিক দুপুরে খুলনা নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় বাসে বাসে চলছে পুলিশের তল্লাশি। এক পর্যায়ে একটি পরিবহন থেকে আটক ব্যক্তির জুতার নিচে কৌশলে রাখা ১২টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। ৭টি স্বর্ণের বারসহ চলতি মাসের ২ তারিখ আটক করা হয় আরেক কারবারিকে। তিনিও ঢাকা থেকে পরিবহনযোগে যাচ্ছিলেন সাতক্ষীরা। দেড় বছরে নগরীতে পুলিশ আটক করেছে এমন ৭টি চালান। উদ্ধার করা হয় ৫০টি স্বর্ণের বার।
এর আগে গত বছরের ১২ জানুয়ারি ৬টি স্বর্ণের বার ভারতে পাচারের জন্য ঢাকা থেকে পরিবহনযোগে সাতক্ষীরা যাচ্ছিলেন এক চোরাকারবারি। খুলনার সাচিবুনিয়া মোড়ে তাকে ৬টি স্বর্ণের বারসহ আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে তিনটি তাকে দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। ওই পাচারকারী বিষয়টি পুলিশকে জানালে, তিন পুলিশ সদস্যকে আটক করা হয়। এসব কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধ দমনে মূল অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদেরও নজরদারিতে রাখা জরুরি।
এ ব্যাপারে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার সময় সংবাদকে বলেন, ‘ঢাকার স্বর্ণ চোরাকারবারিরা এখন ভারতে স্বর্ণের বার পাচারের জন্য খুলনা রুট বেছে নিয়েছে। যে পরিমাণ স্বর্ণ পাচার হচ্ছে তার খুব কমই আটক হচ্ছে।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রধান তালুকদার রাসেল মাহমুদ বলেন, ‘বাহকদের শুধু আটক নয়, মূল হোতাদেরও আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা যেন প্রলোভনে ভুল পথে পা না বাড়ায় সেজন্য কাউন্সিলিং ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।’
এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, পাচার চক্রের সদস্যদের ধরতে সক্রিয় রয়েছে পুলিশ। এ চোরাচালানের সঙ্গে কারা কারা জড়িত তা খুঁজে বের করা এবং তাদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে।