ঈদে ট্রেনের ৩ হাজার টিকিট কালোবাজারির টার্গেট ছিল চক্রটির
ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির দায়ে গ্রেফতারকৃতরা। ছবি: সংগৃহীত
সারাদেশে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের নয়জনকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। চক্রটির মূলহোতা গ্রেফতারকৃত সহজ ডটকমের পিয়ন মো. মিজান ঢালী ও সার্ভার অপারেটর নিউটন বিশ্বাস। সহজডটকম ও কাউন্টারম্যানের মাধ্যমে ঈদে কমপক্ষে ৩ হাজার ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছিল চক্রটি।
তাদের নেতৃত্বে সারাদেশব্যাপী একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল। ট্রেনের টিকিট তারাই ব্লক করে রাখতেন। ফলে সাধারণ যাত্রীরা সার্ভারে ঢুকলেও টিকেট পেতেন না।
শুক্রবার (২২ মার্চ) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, মিজান দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ২০০৩ সালে তিনি চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিলের কমলাপুর রেলস্টেশন শাখায় পিয়ন হিসেবে যোগ দেন। পরে রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ে সিএনএস ডট বিডির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকিটের চুক্তি সহজ ডট কমকে দেওয়া হলে সেখানেও মিজানের চাকরি বহাল থাকে।
দীর্ঘদিন টিকিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকায় দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের অফিসে এবং বড় বড় রেলওয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে মিজানের পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই তিনি বিভিন্ন স্টেশনে থাকা সহজ ডটকমের সদস্য, টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য কালোবাজি চক্রের সদস্যদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টিকিট বিক্রি করতেন।
কমান্ডার মঈন বলেন, সহজ ডটকমের কমলাপুর রেলস্টেশন সার্ভার রুমের সার্ভার অপারেটর নিউটন বিশ্বাস, স্টেশন রিপ্রেজেন্টেটিভ গ্রেপ্তার সবুর হাওলাদারসহ এবং পলাতক আব্দুল মোত্তালিব, আশিকুর রহমানসহ আরও কয়েকজন টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত।
বিশেষ করে ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ্য করে মিজান ও সোহেল বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যক টিকিট সংগ্রহ করতেন। মিজান ও সোহেল প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের কর্মচারী ও টিকিট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ের টিকিট কালোবাজির মাধ্যমে বিক্রি করতেন।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে ৫০ শতাংশ সহজ ডটকম ও রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টার ম্যানরা পেতেন এবং বাকিটা সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজান, সোহেলসহ বাকি বিক্রয়কারী সহযোগীদের মাঝে ভাগাভাগি হতো।
এই অর্থ কখনো তারা হাতে-হাতে বুঝিয়ে দিতেন, আবার কখনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতেন। সিন্ডিকেটের প্রত্যেক সদস্য অবৈধভাবে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে প্রতি মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা উপার্জন করতেন। এভাবেই পরস্পরের যোগসাজশে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিলেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিউটন ২০১২ সালে স্টেশন সাপোর্ট হিসেবে সিএনএস ডট বিডিতে যোগদান করে ২০১৬ সালে সার্ভার অপারেটরের দায়িত্ব পান। পরে ২০২০ সালে সহজ ডট কমে চুক্তিবদ্ধ হলেও তার চাকরি বহাল থাকে এবং পুনরায় সার্ভার অপারেটরের দায়িত্ব পান।
তিনি সার্ভার অপারেটর হওয়ায় বিভিন্ন ট্রেনের শিডিউল ও টিকিট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেন বিধায় এ বিষয়ে সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজানকে তথ্য প্রদান করতেন। গ্রেপ্তার সবুর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সহজ ডট কমের স্টেশন রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে চাকরি করতেন। গ্রেপ্তার সবুর সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজানের সঙ্গে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এরআগে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর কমলাপুর এবং সবুজবাগ এলাকায় র্যাব-৩ ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) যৌথ অভিযানে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের অন্যতম মূলহোতা সহজ ডটকমের পিয়ন মো. মিজান ঢালী ও সার্ভার অপারেটর নিউটন বিশ্বাসসহ নয়জনকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতাররা হলেন, দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্র ‘ঢালী’ সিন্ডিকেট’র মূলহোতা মো. মিজান ঢালী, মো. সোহেল ঢালী, মো. সুমন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. শাহজালাল হোসেন, মো. রাসেল, মো. জয়নাল আবেদীন, মো. সবুর হাওলাদার ও নিউটন বিশ্বাস। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ট্রেনের বিপুল পরিমাণ টিকিট, আটটি মোবাইল ফোন, একটি এনআইডি, একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স, কালোবাজারির বিভিন্ন আলামত এবং টিকিট বিক্রির নগদ ১১ হাজার ৪২২ টাকা জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার স্বীকার করেন।