কি করলে ঠেকানো যাবে মোটরসাইকেল চুরি, জানালেন ‘চোরদের গুরু’
মোটরসাইকেল চোরদের ‘‘গুরু’’ খ্যাত আবুল কালাম আজাদ। ছবি: সংগৃহীত
প্রায় তিন দশক ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বসবাস। কখনও রিকশা চালিয়ে, কখনও ঠেলাগাড়ি ঠেলে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। এরপর ২০১০ সালে ঢাকার রামপুরা এলাকায় চুরি হয়ে যায় নিজের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম তার রিকশাটি। এরপর নিজেই শুরু করেন রিকশা চুরি। এক বছর পর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যেতে হয় কারাগারে। সেখানে পরিচয় হয় এক মোটরসাইকেল চোরের সঙ্গে।
জামিনে বেরিয়ে রিকশা চুরি ছেড়ে হাত পাকান মোটরসাইকেল চুরিতে। মাসে চার-পাঁচটি মোটরসাইকেল চুরি করতেন। ধরাও পড়েছেন বহুবার। বলছিলাম মোটরসাইকেল চোরদের ‘‘গুরু’’ খ্যাত আবুল কালাম আজাদের কথা। এ পর্যন্ত অন্তত ৪৫ বার গ্রেপ্তার হন ও কারাগারে যান আবুল কালাম। এছাড়াও বিভিন্ন মামলায় পুলিশ তাকে রিমান্ডে নেয় ১০-১২ বার। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলার সংখ্যা ৫৩টি।
গত ৫ অক্টোবর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। তবে সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ফের গ্রেপ্তার হয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তালিকায় শীর্ষ এই মোটরসাইকেল চোর। গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবুল কালাম আজাদ মোটরসাইকেল চুরি ঠেকাতে চালকের কী ধরনের নিরাপত্তা নেওয়া উচিত, এ বিষয়ে তিন ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। এর একটি ব্যবস্থা নিলেই মোটরসাইকেল চুরি রোধ সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
আবুল কালাম আজাদের প্রথম পরামর্শ, মোটরসাইকেলে অ্যালার্ম লাগানো যেতে পারে। এতে কেউ মোটরসাইকেল স্পর্শ করলেই অ্যালার্ম বেজে উঠবে। কোনো মোটরসাইকেলে অ্যালার্ম বাজলে ধরা পড়ার ভয়ে চোর সেটি চুরি করতে আগ্রহী হয় না। দ্বিতীয়ত, জিপিএস ট্র্যাকার লাগানো যেতে পারে। এর মাধ্যমে খুব সহজে মোটরসাইকেলের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব। আর তৃতীয়ত, উন্নতমানের “ডিস্ক লক” ব্যবহার করা হলে সেটি ভাঙতে অনেক সময় লাগে। এ ধরনের তালা লাগানো থাকলে চোর ঝুঁকি নিতে চায় না।
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, “আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনেকে মোটরসাইকেলের ‘হ্যান্ডল লক’ করে মোটরসাইকেল রেখে চলে যান। এটি মোটেও নিরাপদ নয়। কারণ, এই লক ভেঙে মোটরসাইকেল চুরি করতে ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ড সময় লাগে। আবার অনেকেই ‘ঢালাই তালা’ ব্যবহার করেন। এই তালা ভেঙে মোটরসাইকেল চুরি করতে দেড় মিনিটের মতো লাগে।”
ডিবির ওয়ারী অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, “৫ অক্টোবর জামিনে মুক্ত হওয়ার পর ওয়ারী অঞ্চলে অন্তত আটটি মোটরসাইকেল চুরি করেছেন আবুল কালাম আজাদ। ওই ঘটনাগুলোর তদন্ত করতে গিয়ে আবুল কালামকে তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।”
এদিকে নিজেকে ‘‘শীর্ষ চোর’’ দাবি করে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে আবুল কালাম আজাদ বলেন, “মোটরসাইকেল চুরিতে তার মতো পারদর্শী আর কেউ নেই। তার কাছ থেকে মোটরসাইকেল চুরি শিখে এখন অনেক শিষ্য বড় চোর হয়েছেন। তারা এখন আলাদা আলাদা চক্র গড়ে তুলেছেন।”
ডিবির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আবদুল আহাদ বলেন, “আবুল কালামের নেতৃত্বে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল চোর চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের পর চোর চক্র সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।”