৩০ মিনিটেই ২৪ লাখ টাকার মালামাল চুরি!
চুরির অভিযোগে জুলহাস (৩১) ও বিল্লাল হোসেন (২৬) নামে দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সাভার ও চাঁদপুর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ মহসীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে এক জোড়া হাতের চুরি, এক জোড়া কানের দুল, একটি চেইন এবং গলিত রূপান্তরিত স্বর্ণসহ মোট ৮ ভরি ১০ আনা স্বর্ণ এবং বিভিন্ন ধরনের চাবি, রেঞ্জসহ চুরি করার বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মিরপুর মডেল থানার আহাম্মেদনগরে জনৈকা সিরাজুম মুনীরার বাসার তালা ভেঙে আনুমানিক ২৪ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরি করা হয়। পরে সিসিটিভি দেখে জুলহাস বিল্লাল সহোদরকে শনাক্ত করা হয়। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সাভার গেণ্ডা বাস স্টেশন থেকে বিল্লাল হোসেন এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদপুরের মতলব থেকে জুলহাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া চোরাই এসব স্বর্ণ রাখার অভিযোগে লিটন বর্মণ নামে এক স্বর্ণ দোকানদারকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৫ বছর ধরে চুরি করে দুই ভাই!
পুলিশ জানায়, ভোলার লালমোহন উপজেলার আবু কালামের ছেলে জুলহাস ও বিল্লাল। চুরি শুরু করে সেই ছোটবেলা থেকেই। দুইজনে চুরি শুরু করে ২০০৮ সাল থেকে। তখন থেকে আজ ১৫ বছর ধরেই চুরি করছে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, এই ১৫ বছরে তারা দুই শতাধিক চুরি করে। চুরি করেই তারা অন্য জেলায় চলে যায়। ফলে অধিকাংশ ঘটনায় তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এতগুলো চুরি করলেও তারা ধরা পরে মাত্র ১০ বারের মত। আর মামলা হয়েছে মাত্র ৩ টি! অন্যান্য সবাই সবকিছু চুরি করলেও জুলহাস বিল্লাল শুধু স্বর্ণ ও নগদ টাকা চুরি করে। কারণ এই দুইটি সহজেই বহনযোগ্য।
থানা পুলিশ জানায়, শুধু দিনের বেলা চুরি করে জুলহাস-বিল্লাল সাধারণত সব চোর রাতের বেলা চুরি করলেও ব্যতিক্রম এই দুই সহোদর। তারা চুরি করে দিনের বেলা। দিনের বেলা সাধারণত যে সময়টাতে বাচ্চারা স্কুলে থাকে সেই সময়টাকেই তারা চুরির জন্য বেছে নেয়। সেই সময় ঘরের পুরুষ সদস্যরা অফিসে থাকে। আর মহিলা সদস্যরা বাচ্চার স্কুলে থাকে। ফলে বাসা পুরো ফাঁকা থাকে। গাড়ি চালানোর সুবাদে আগে থেকেই এমন একটি বাসা টার্গেট করে বিল্লাল। পরে জুলহাসসহ এসে টার্গেট সেই বাসায় চুরি করে।
১১ বছর বয়সে শুরু, ছোট ভাই গুরু!
পুলিশের তথ্য মতে, দুই ভাইয়ের মধ্যে জুলহাস বড়, বিল্লাল ছোট। বয়সে ছোট হলেও চুরিতে বড় বিল্লাল! মাত্র ১১ বছর বয়স থেকেই চুরি শুরু করে বিল্লাল। তখনো শুধু স্বর্ণ আর টাকা চুরি করত সে। পরে তার কাছ থেকেই চুরি শেখে জুলহাস। দুই ভাই মিলে চুরি করলে বিল্লাল সবসময়ই বাসা টার্গেট করে এবং পাহারায় থাকে। আর চুরি করে জুলহাস।
৩০ মিনিটেই ২৪ লাখ টাকার চুরি!
কেউ না দেখে মতো তৃতীয় তলায় উঠে, এরপর দরজার তালা ভাঙে, ঘরের ভেতর প্রতি আলমারির তালা ভাঙে, প্রতি ওয়ারড্রোবের লক খোলে, প্রতি ড্রয়ার খোলে, এরপর স্বর্ণের হদিছ পেয়ে ২৪ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরি করে। আর এসব কিছু করতে জুলহাসের সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট! ৩০ মিনিটেই প্রায় ২৪ লক্ষ টাকার মালামাল চুরি করে সে!
জামাই চুরি করে, শ্বশুর বিক্রি করে!
জুলহাসের শ্বশুর মো. আলাউদ্দিন। তিনি থাকেন চাঁদপুরের মতলবে। প্রতিবার চুরি করার পরপরই শ্বশুর বাড়ি চলে যায় জুলহাস। জামাইয়ের এই চুরির কথা শ্বশুরের অজানা নয়। কিন্তু তিনি এতে বাধা দেওয়া দূরের কথা, উল্টো সহযোগিতা করেন জামাইকে! জামাই জুলহাস স্বর্ণ চুরি করে তা শ্বশুরের হাতেই তুলে দেয়। আর শ্বশুর সেই স্বর্ণ বিক্রি করেন! মিরপুর থেকে চুরি করা স্বর্ণও জুলহাস তার শ্বশুরের হাতেই তুলে দেয়। শ্বশুর সেই স্বর্ণ চাঁদপুর উত্তর মতলবের ছেঙ্গারচর বাজারের একটি স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করে দেন! অভিযান চালানোর সময় জামাই জুলহাস গ্রেপ্তার হলেও পালিয়ে যান শ্বশুর আলাউদ্দিন।
কেএম/আরএ/