বাবাকে খুন করে ডাকাতির নাটক সাজান মাসুদ!
মুক্তিযোদ্ধা আ. হালিমের (৭২) দুই মেয়ে ও এক ছেলে। দুই মেয়েকে সম্পত্তির ভাগ দেওয়ার কথা শুনেই বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করে একমাত্র ছেলে এইচএম মাসুদ। এ জন্য পাঁচ লাখ টাকা চুক্তিতে এক অটো ড্রাইভার মো. রুবেলকে যুক্ত করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্বাসরোধ করে বাবাকে হত্যাও করেন। তবে সেই হত্যাকাণ্ডকে ডাকাতির নাটক সাজান ছেলে মাসুদ।
রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদরদপ্তরে রুবেলকে গ্রেপ্তারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আ. হালিমের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ টাকা তোলেন তিনি। সেই টাকা থেকে দুই মেয়েকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছেলেকে জানান হালিম। এ ছাড়া হালিম তার সম্পত্তির ভাগও দিতে চান দুই মেয়েকে। এতেই বাবা হালিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে মাসুদ। এই পরিকল্পনায় যুক্ত করেন পরিবারের পূর্বপরিচিত অটো ড্রাইভার মো. রোবেলকে।’
পিবিআই জানায়, হালিমের পরিবারের পূর্বপরিচিত রুবেল। তিনি পরিবারটির বিভিন্ন কাজকর্ম করে বিশ্বস্ততা অর্জন করেন। ঘটনার দিন মাসুদ রুবেলকে ফোন দিয়ে দ্রুত তাদের বাড়িতে যেতে বলেন। রাতে ফোন পেয়ে রুবেল বাসায় প্রবেশ করে। বাসার ২য় তলায় যেখানে মাসুদ এবং তার বাবা বসবাস করেন সেখানে গিয়ে পূর্ব থেকেই অবস্থান নেয়। রাতে মাসুদের বাবা ঘুমিয়ে পড়লে তারা উভয়ই তার রুমে প্রবেশ করে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পিবিআই এর পুলিশ সুপার আরও বলেন, তারা প্রথমে বিছানার মশারি খোলেন। মাসুদ তার বাবার হাত পা চেপে ধরেন এবং রুবেল তার দুই হাত দিয়ে হালিমের গলা চেপে ধরেন। এতে হালিম চিৎকার দিলে রুবেল বালিশ দিয়ে তার মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মারা যাওয়ার পর তার ছেলে মাসুদ তার ঘরে থাকা ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্র দিয়ে ব্লাড প্রেসার মেপে মৃত্যু হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হন। পরে আলমারি থেকে ৫ লাখ টাকা এবং তাদের বাসার সিসি টিভি ক্যামেরার ডিবিআর বক্স বাইরে ফেলে দেওয়ার জন্য রুবেলকে দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য ডাকাতির নাটক সাজাতে আসামি রুবেল নিহতের ছেলে মাসুদাকে পাটের রশি দিয়ে হাত-পা এবং গামছা দিয়ে মুখ বেধে ফ্লোরে ফেলে রাখে। আর বাসা থেকে টাকা এবং সিসি টিভি ক্যামেরার ডিবিআর বক্স নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এই ঘটনার পর আশপাশের মানুষকে ডাকাতরা তাকে বেঁধে তার বাবাকে হত্যা করেছে বলে জানায় মাসুদ। পরদিন রুবেলকে পলাতক থাকার কথাও বলেন মাসুদ।
পিবিআই বলছে, ঘটনার পর পলাতক থাকেন মো. রুবেল। এ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পর গতকাল শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় তার বোনের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর এই ঘটনায় জড়িত অপর আরেক আসামি মাসুদকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
কেএম/এমএমএ/