সাগর-রুনির হত্যা: তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ র্যাব
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ১১ বছরেও তদন্ত প্রতিবদেন জমা দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র্যাব। এখন পর্যন্ত তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের জন্য ৯৫ বার সময় চেয়ে আবেদন করেছে তারা।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এই রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করে রুনির পরিবার। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা তো দূরের কথা আজ ১১ বছর পার হলেও শনাক্ত করতে পারেনি হত্যাকারীদের। অবশ্য এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে।
১১ বছরেও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্ত সংস্থা র্যাব। স্বজনহারা পরিবার ও সহকর্মীদের প্রশ্ন, বিচার পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে তাদের।
এই হত্যাকাণ্ডের ৪ দিন পর ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তবে ৬২ দিন পর তারাও হত্যা রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হলে হাইকোর্টের নির্দেশে ওই বছরের ১৮ এপ্রিল মামলার তদন্তভার হাত দেওয়া হয় এলিট ফোর্স র্যাবের কাছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর কবর থেকে তোলা হয় সাগর-রুনির মরদেহ।
এরপর ৯ ধরনের আলামতের ডিএনএ টেস্ট করতে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায় র্যাব। সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরও কোনো কুলকিনারা করতে পারেনি সংস্থাটি। এ কারণে এখন পর্যন্ত তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের জন্য ৯৫ বার সময় চেয়ে আবেদন করে তারা।
সাগর-রুনি হত্যার শুরু থেকেই এ নিয়ে একাধিকবার আন্দোলন করেছে সাংবাদিক সমাজ। তাদের মতে, ১০ বছরেও চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে না পারা তদন্ত সংস্থার ব্যর্থতা।
আগামী ৫ মার্চ ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। অনেকে বলছেন এবারও তদন্তকারী সংস্থা সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত দিতে ব্যর্থ হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, সাগর-রুনি হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যার বিচারের জন্য জোর দাবি জানাই।
১১ বছরেও সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে ব্যর্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ৯৪ বার সময় দেওয়ার পরও পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি র্যাব। এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ সাংবাদিকরা। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা রহস্য উন্মোচন না হলে শিগগিরই কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
এ হত্যাকাণ্ডে করা মামলার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত সংস্থা ডিএনএ টেস্টের অপেক্ষায় ছিল ১১ বছর। সাংবাদিক সমাজ বলছে, শুধু ডিএনএ টেস্টের মধ্যেই তদন্তকারী সংস্থা সীমাবদ্ধ রয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, সাগর রনি হত্যার পর অপরাধীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই ৪৮ ঘণ্টা থেকে আজ ১১ বছর।
তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে আমরা আসলেই লজ্জিত। আমার মনে হয় রাষ্ট্রও লজ্জিত। রাষ্ট্রের লজ্জা হওয়া উচিত কারণ এত বড় একটি হত্যাকাণ্ডে এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি এবং সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও অপরাধীদের শাস্তির দাবি করছি অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ এটি কোনোভাবে মেনে নেবে না।
তবে এই বিষয়ে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বলছে, ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টগুলো হাতে আসছে। রিপোর্ট ও অপরাধচিত্রের প্রতিবেদন (ক্রাইম সিন রিপোর্ট) পর্যালোচনায় দুজনের ডিএনএর পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পেলেও সন্দেহভাজন খুনি এখনো শনাক্ত হয়নি।
ফলে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তারের আশা প্রায় ক্ষীণ। ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার পরও সন্দেহভাজন খুনিদের শনাক্ত করতে না পারায় খোদ হতাশায় রয়েছে র্যাব কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল বলেন, সম্প্রতি ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পেয়েছে র্যাব। তবে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার মতো পর্যাপ্ত নয়। যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ জনের ডিএনএ নমুনা পাঠানো হয়েছিল। এ মামলা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি আমরা।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় আমরা বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়েছি। বিদেশে ডিএনএ টেস্টের ও তাদের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করছি।
কেএম/এসএন