৬ কোটি টাকা প্রতারণা করে দোকান-ফ্ল্যাট ব্যবসা
কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং অর্থ আত্মসাতের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. হাসান ছালামকে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা হতে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। তাকে ধরার পর র্যাব জানায়, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
র্যাব জানায়, লোকজনের কাছ থেকে প্রথমে বসুন্ধরা সিটিতে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে জেমস্ সুপারশপ নামে পাথরের ব্যবসা শুরু করেন। পরে বিভিন্ন ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আরও কয়েক কোটি টাকা নিয়ে বসুন্ধরা সিটিতে চারটি দোকান ভাড়া করে বিভিন্ন ব্যবসাসহ ফ্ল্যাট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন।
র্যাবের তথ্য মতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ না করা ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করে তা পরিশোধ না করায় অর্থঋণ জালিয়াতি, চেক জালিয়াতি মামলায় ২০২০ সালে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এতে রাজধানীর ডেমরা, উত্তরা, কেরানীগঞ্জ ও মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন সময় গা ঢাকা দিয়ে থাকেন আসামি মো. হাসান ছালাম (৪১)। তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ জালিয়াতি, চেক জালিয়াতিসহ তার স্ত্রীর করা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে রয়েছে একাধিক মামলা।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, আসামি হাসান ছালাম রাজধানী ঢাকা ও কুমিল্লায় জেমস্ সুপার শপ লিমিটেড, জেমস্ অ্যান্ড জুয়েলার্স, মতিঝিলে মা টেলিকম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে উজির আলী ট্রাভেলস, কুমিল্লা কান্দিরপাড়ে ডায়মন্ড গ্যালারি লিমিটেডসহ যৌথ মালিকানা মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করত। দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিক মুনাফার আশায় সে একই সময় একাধিক প্রতিষ্ঠানে যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে থাকে। এতে ভালো মুনাফা হওয়ায় আরও বেশি বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়িক পার্টনারসহ আত্মীয় স্বজন এবং পরিচিত লোকজনের কাছ থেকে উচ্চ হারে মাসিক লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে কোটি টাকার অধিক হাতিয়ে নেয়। কিছুদিন লভ্যাংশ দিলেও পরে তা বন্ধ করে দেয়। পাওনাদাররা টাকার জন্য নিয়মিত তাগিদ দিতে থাকলে সে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চেক দিলেও তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা পাওয়া যায় না এবং ব্যাংক চেক ডিজঅনার করে দেয়। পাওনাদাররা টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও প্রাণনাশের ভয়ভীতি দিত। এতে তারা আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করে। ওইসব মামলায় তার নামে গ্রেপ্তারি পরায়ানা হয়।
তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া আসামি ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ফাইন্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, ইবিএল, প্রাইম ব্যাংক এবং প্রিমিয়াম ব্যাংকসহ আরও বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ঋণ নেয়। প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানসমূহের কয়েকটি মাসিক কিস্তি পরিশোধ করলেও পরে তা বন্ধ করে দেয়। নিদির্ষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধ না করায় এ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাকে বারবার চূড়ান্ত নোটিশ দেয়। পরে আদালতে আর্থিক ঋণ খেলাপের দায়ে মামলা করে প্রতিষ্ঠানগুলো। মামলাগুলোর শুনানিতে হাজিরাও দেয়নি। কৌশলে এ সব ঋণের দায় এড়ানোর জন্য সে তার বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দোকান বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহে জমি ক্রয় করে। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে সে পান্থপথে তার আলিশান ফ্ল্যাট বিক্রি করে ডেমরা এলাকায় বন্ধুর বাসায় গা ঢাকা দেয় এবং পলাতক থাকা অবস্থায় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশ ছেড়ে ইউরোপে পালিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও বলেন, জেমস্ সুপারশপে (বসুন্ধরা সিটি) পার্টনারশিপে মাসিক ৫০ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গিয়াস উদ্দিন নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে। পরে গিয়াস উদ্দিন হাসানের কাছ থেকে প্রতি মাসে তার লাভের টাকা চাইলে সে বিভিন্নভাবে তালবাহানা করতে থাকলে তার মূলধন ফেরত চায়। এতে হাসান মূলধন ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি দেওয়া ও তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এতে হাসানের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করে গিয়াস উদ্দিন। ২০২২ সালে হাসান ছালামকে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
ব্যক্তিগত জীবনে হাসান ছালাম তার স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে সে এবং তার পরিবার আলাদা বসবাস করে। আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/আরএ/