বড় কারবারিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে, ঢাকায় দেদারছে ঢুকছে ইয়াবা
ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বড় ব্যবসায়ীরা বরাবরই থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। যারা ধরা পড়েন তাদের কেউই ইয়াবার ব্যবসায়ী নয়। এরা সবাই ইয়াবার বাহক মাত্র। সামান্য অর্থের বিনিময়ে তারা ইয়াবার চালান এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিরাপদে পৌঁছে দেন। এই বাহকদের মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছেন গাড়ি চালক, হেলপার, ভাসমান মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণির লোক। ইয়াবা সেবনকারীরাও বাহক হিসেবে ব্যবহৃত হন। এ সব তথ্য পুলিশ ও গোয়েন্দাদের।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়েই রাজধানীতে প্রতিদিন ঢুকছে ইয়াবার চালান। মাদকসেবীদের কাছে অন্য যেকোনো মাদকের চেয়ে ইয়াবার চাহিদা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়াবা আকারে ছোট হওয়ায় এটি সহজেই নানা কৌশলে বহন করা যায়। আর এক শ্রেণির মানুষ অতিরিক্ত টাকার নেশায় মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে।
গোয়েন্দা তথ্য মতে, বর্তমানে ঢাকাতে ইয়াবা প্রবেশ করছে সড়ক ও নৌ পথ দিয়ে। গাবতলী, যাত্রাবাড়ি, আব্দুল্লাহপুর টঙ্গি, আমিন বাজার, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালসহ বিভিন্ন পথে ইয়াবার চালান ঢাকায় ঢুকছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২১ ও ২০২২ সালে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৪ হাজারেরও বেশি সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীর একটি চুড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, যাদের চিহ্নিত করে এই তালিকা করা হয়েছে, তাদের নজরদারিতে রেখে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে বেশির ভাগ গডফাদাররা গ্রেপ্তার হয়নি। অনেকে এটি ছেড়ে অন্যান্য ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদক ব্যবসায় জড়িত গডফাদার এবং প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। কারণ প্রভাবশালীরা অনেক সময় এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে না। তারা দূর থেকে মাদক কারবারিদের সহযোগিতা করে। যে্ কারণে মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাদকবিরোধী অভিযানের তেমন কোনো সফলতা আসে না।
ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশের একটি তথ্য অনুযায়ি, ২০১৮ সালে ডিএমপির মাদক বিরোধী অভিযানে ১৬ হাজার ৯২০ জন মাদক সেবনকারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার করা হয় ১০ হাজার ৮০০ জনকে। ২০২০ সালে ১৪ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২১ সালে গ্রেপ্তার করা হয় ১৬ হাজার ২০০ জন ব্যক্তিকে। গত বছর গ্রেপ্তার করা হয় ১৮ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, পুলিশ সর্বদা মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। মাদকসেবী ও মাদক কারবারিদের তথ্য পুলিশকে দিয়ে সহযোগিতা করুন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যেসব এলাকা দিয়ে ঢাকায় ইয়াবা বা অন্যান্য মাদক প্রবেশ করে সেসব এলাকায় আমাদের মেট্রোপলিটন পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ অপরাধীদের ধরতে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
তিনি বলেন, যদি আপনাদের কাছে মাদক কারবারীদের কোনো তথ্য থাকে তাহলে আপনারা এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেই ইয়াবা বা অন্যান্য মাদক অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
এনএইচবি/আরএ/