নিখোঁজ পরিবারের অভিযোগ
জিডিতে তথ্য গোপন করতে বাধ্য করেছিল পুলিশ
গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজনেরা থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) প্রকৃত তথ্য গোপন করেছেন বলে অভিযোগ করেছিলো পুলিশ। তবে এবার সেই অভিযোগের ব্যাখা দিতে গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজনেরা। তারা বলছেন, জিডিতে গুমের প্রকৃত তথ্য আড়াল করতে বাধ্য করেছিলো পুলিশ। অন্যথায় জিডি নেয়া হচ্ছিলো না।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মায়ের ডাকে’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এমন অভিযোগ তোলেন গুমের স্বীকার ব্যক্তি স্বজনেরা।
সংগঠনটির সমন্বয়ক আফরোজা ইসলাম অভিযোগ করেন, পুলিশ এখন বলার চেষ্টা করছে যে জিডির কপিতে তথ্য গোপন করা হয়েছে। স্বজনেরা যখন গুম হন, তখন পুলিশ মামলা বা থানায় সাধারণ ডায়েরি নিতে চায়নি। তার ভাই সাজেদুল ইসলাম গুম হওয়ার পর তারা ভাটারা থানায় গেলে পুলিশ বলেছে তেজগাঁওয়ে যেতে, তেজগাঁওয়ে গেলে বলেছে উত্তরায় যেতে হবে।
বেশ কয়েক জন প্রত্যাক্ষদর্শীর সামনে থেকে র্যাব তাকে ধরে নিয়ে গেছে এই কথা বললে আর জিডি করা যায়নি। বলা হয়েছে, বাসায় ফেরেনি, খুঁজে পাওয়া যায়নি এভাবে লিখতে। এসব কথা আগেও অজস্রবার বলা হয়েছে। এখন নতুন করে ধানাইপানাই করা হচ্ছে যে তথ্য গোপন করা হয়েছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলো একটা স্বাধীন নিরপেক্ষ, বিচারবিভাগীয় তদন্ত চায়। জাতিসংঘের তদন্ত কমিটিকে আসতে দেওয়ার দাবি করেন তারা।
কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেনের স্ত্রী নাসিমা আক্তার অভিযোগ করেন, তিন বছর ধরে স্বামীর খোঁজে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। তিন বছর পর এখন পুলিশ এসে জিজ্ঞাসা করছে, ইসমাইল সত্যিই গুম হয়েছেন কি না। সে সময় আমি থানায় গেছি, পুলিশ আমাকে থানা থেকে বের করে দিয়েছে। পুলিশের ডিসি আমার চিঠিটা একবার পড়ল না। বলে র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনি র্যাবের কাছে যান।
পুলিশ এখন তিন বছর পর এসে জিজ্ঞেস করে আমার স্বামী আসলে গুম হয়েছে, নাকি কোথাও চলে গেছে। আমাদের কষ্ট লাগে, ঘেন্না আসে এখন।
প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি।
এরআগে নিখোঁজ ব্যাক্তির স্বজনরা অভিযোগ করেছিলেন সাদা কাগজে তাদের স্বাক্ষর নিয়েছে পুলিশ। এই খবর কয়েকটি গণমাধ্যমে আসার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বলা হয় নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনেরা জিডি করার সময় তথ্য আড়াল করেছেন। জিডিতে তারা এক ধরণের তথ্য লিখেছেন, আর এখন তারা আরেক ধরণের তথ্য দিচ্ছেন।
এনএইচ/