হত্যার পরও শিশুটিকে ধর্ষণ করেছিল সুজন!
২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ সদরের আলীরটেকস্থ সংঘটিত চাঞ্চল্যকর ১০ বছরের শিশু গণধর্ষণের পর হত্যায় জড়িত থাকা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামিকে দীর্ঘ ১৯ বছর পলাতক থাকার পর রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান র্যাব-১১।
রবিবার (২৩ অক্টোবর) র্যাব-১১ এর অভিযানে রাতে সুজন ওরফে মো. নিজামুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আসামি তার অপরাধ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছে এবং এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে সব কিছু শিকার করেছে। তাকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানায়, তারা দশ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যা করে। এরপর তার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও ধর্ষণ চালিয়ে যায়।
ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত চার জন আসামি। ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা এ তথ্য নিশ্চিত জানিয়েছেন।
তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, ২০০৩ সালের ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানার আলীরটেক এলাকায় একটি ১০ বছরের শিশু গণধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ড ঘটনা ঘটে।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন শিশুটির লাশ সরিষা ক্ষেতে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় মানুষ ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ঘটনাটি শিশুটির পরিবারকে জানায়।
পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশটিকে উদ্ধার করে সুরতহাল তৈরি করে এবং লাশটি সদর উপজেলার আলীরটেক এলাকার আলী আকবরের মেয়ে খাদিজা আক্তার (১০) বলে সনাক্ত হয়।
ওই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এ একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর নিহতের ময়না তদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়। ওই মামলায় আসামি সুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং সংশ্লিষ্ট চার্জশীট পর্যালোচনায় জানা যায় সে ঘটনার দিন দুপুরে ভিকটিম খাদিজা এবং তার এক প্রতিবেশী বান্ধবী আলীরটেকে একটি মাহফিল দেখার জন্য আসামি সুজনের বাড়িতে যায়।
সুজন নিহত ভিকটিমের দুঃসম্পর্কের আত্নীয়। সুজনের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে প্রতিবেশী বান্ধবীর নিকটস্থ খালার বাসায় তারা বেড়াতে যায়। পরবর্তীকালে রাত হয়ে গেলে ভিকটিমের বান্ধবী তার খালার বাসায় থেকে যায়।
এরমধ্যে পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুজন ভিকটিমকে তার বাড়ীতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সঙ্গে নিয়ে আসে। পথিমধ্যে সুজন এবং ওৎ পেতে থাকা তার আরও তিন সহযোগী পরস্পর যোগসাজশে ভিকটিমকে (খাদিজা) জোরপূর্বক একটি সরিষা ক্ষেতে নিয়ে তার পরিহিত পোশাক দিয়ে হাত, পা এবং মুখ বেধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের এক পর্যায়ে এই চার নরপিশাচ ভিকটিমের বুকের পাজর, হাত ও পা বিকৃত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্নক জখমসহ শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারা এতই নৃশংস ছিল যে ভিকটিমের মৃত্যু পরও ধর্ষণ চালিয়ে যায়। ধর্ষণ শেষে লাশটিকে সরিষা ক্ষেতে রেখে সবাই পালিয়ে যায়।
র্যাব-১১ জানায়, এই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত, মামলার বিচার শেষে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(৩) ধারায় অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৮ সালের ১১ জুন চার ধর্ষককে অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের দেন।
আদালত হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৬৮ ধারায় বর্ণিত বিধান মোতাবেক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত উক্ত আসামিকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কর্যকর করার আদেশ প্রদান করেন।
কেএম/এমএমএ/