কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার ৩ বন্ধু
বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টের নামে ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে অর্থ আত্মসাৎ চক্রের মুলহোতাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির পশ্চিম বিভাগের একটি টিম। বুধবার (১০ মার্চ) রাতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-মো. আলমগীর হোসাইন (৪৮), মো. শফিকুল ইসলাম (৪৬) ও (৩) মো. ইমরান হোসাইন (৪৪)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬টি মোবাইল, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডারের কপি, সাপ্লায়ারদের সঙ্গে স্ট্যাম্প চুক্তিপত্রের কপি, দশ কোটি টাকা কাবিনের ফটোকপি জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সিআইডির সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির ঢাকা পশ্চিম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার সামসুন নাহার।
বিশেষ পুলিশ সুপার সামসুন নাহার বলেন, ‘রাজধানীর গুলশান-এ আল তাকদীর ইন্টারন্যাশনাল নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান খুলে একটি চক্র ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করে প্রায় ৮,০০০ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে মর্মে প্রচার করে বিভিন্ন সাপ্লায়ারদের সাব কন্ট্রাক্টের কাজ দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে আসছিল।’
তিনি বলেন, ‘এ চক্রের মূলহোতা আলমগীর হোসেন জাপানের ওবায়াসি করপোরেশন কর্তৃক সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টের ৩০০ কোটি সিএফটি বালি সাপ্লাই এর জন্য গত বছরের মার্চে ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছে বলে প্রচারণা চালায়। তার নিজস্ব অনলাইন টিভি ‘Takdir TV’ চ্যানেলেও এর প্রচারণা চালায়।
সিআইডি জানায়, সে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৩০০ আগ্রহী সাপ্লায়ার সংগ্রহ করে। এ ১ সিএফটি বালিতে ১০ টাকা লাভ হবে মর্মে সকল সাপ্লায়ারদের নিকট থেকে কাউকে ২ কোটি সিএফটি, কাউকে ৫ কোটি সিএফটি, কাউকে ১০ কোটি সিএফটি এবং কাউকে ২০ কোটি সিএফটি বালি ভরাটের কাজ সাব-কন্টাক্ট্রে দেবেন এমন চুক্তি করে এবং কমিশন হিসাবে একেক জন সাপ্লায়ার সর্বোচ্চ ৯০ লক্ষ হতে সর্বনিম্ন ৭ লক্ষ টাকা করে প্রায় ৩০০ সাপ্লায়ার এজেন্সির মালিকদের নিকট হতে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা প্রতারণা করে।
তিনি আরও বলেন, নিজেকে অতি বড় মাপের কন্ট্রাক্টর প্রমানের জন্য গুলশান-১ এ অফিস নিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে অফিসের ডেকোরেশন করে। গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে ১১০ আইটেমের খাবার পরিবেশন করে তার নিয়োগকৃত সাপ্লায়ারদের আপ্যায়ন করে। বড় সাপ্লায়ারদের নিয়ে বিভিন্ন রিসোর্টে কয়েকবার বড় ধরনের পার্টির আয়োজন করে। প্রজেক্ট এলাকায় সাপ্লায়ারদের নিয়ে ‘প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রীজের বালি সরবরাহে নিজস্ব ডাম্পিং পয়েন্ট এর শুভ উদ্ভোধন লেখা ব্যানারে যমুনা সেতুর পাশে লালগালিচা বিছিয়ে ধুমধাম করে কাজ উদ্ভোধন করে।’
এসবের অনেক ছবি ও ভিডিও চিত্র বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে রয়েছে। এ প্রোগ্রামে নামী-দামী অনেক ব্যক্তিদের উপস্থিত দেখা যায়। তার এ ধরনের কার্যকলাপ দেখে বিশেষ করে টাঙ্গাইল এলাকাসহ দেশের অন্যান্য এলাকার অনেক সাপ্লায়ার কাজ পাবার আশায় প্রতারক আলমগীরের অফিসে যোগাযোগ করে। এবং তারা লক্ষ লক্ষ টাকা কমিশন দিয়ে কাজের চুক্তিপত্র করে। এভাবে জাল জালিয়াতি ও প্রতারণা
করে মোটা অংকের টাকা সংগ্রহ করে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। সাপ্লায়াররা বালি ফেলানোর জন্য আল-তাকদির এর চেয়ারম্যান আলমগীরের সঙ্গে যোগযোগ করার চেষ্টা করলে প্রতারক আলমগীর, তার পিডি ও পরিচালকদেরকে ফোনে না পেয়ে এবং অফিস বন্ধ পেয়ে বুঝতে পারে সাপ্লায়াররা প্রতারিত হয়েছে।
সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, ভুক্তভোগী কয়েকজন বিষয়টি সিআইডিকে জানালে সিআইডি ঢাকা মেট্রো-পশ্চিম বিষয়টি অনুসন্ধান করে অভিযোগের সত্যতা পায় এবং সুকৌশলে মূলহোতা আল তাকদীর ইন্টারন্যাশনাল এর চেয়ারম্যান আলমগীরসহ প্রজেক্ট ডিরেক্টর শফিকুল ইসলাম এবং পরিচালক (প্রশাসন) ইমরান হোসাইন ও তার সহযোগীদের রাজধানীর খিলগাঁও ও গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, এ সময় অভিযানকালে আলমগীরের দখল হতে বিভিন্ন সাপ্লায়ারদের সাথে স্ট্যাম্প চুক্তিপত্রের কপি ও দশ কোটি টাকা কাবিনে নিকাহনামার ফটোকপি জব্দ করা হয়।
পুলিশ সুপার সামসুন নাহার বলেন, নিকাহ নামা জব্দের পর জানা যায়, মুলহোতা আলমগীরের সঙ্গে ব্যাংকের লেনদেনের সুত্র ধরে ইস্টার্ণ ব্যাংকের এক নারী কর্মকর্তা সালমা সুলতানা সুইটির সঙ্গে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে এবং ওই নারী ব্যাংক কর্মকর্তা নিজে গ্রান্টার হয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ২০০০ কোটি টাকার এলসি, ১২০০ কোটি টাকা ক্যাশ করে দিবে বলে আলমগীরকে আশ্বস্ত করে। এরুপ আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আলমগীর তার ১ম স্ত্রীকে না জানিয়ে ব্যাংকার সালমা সুলতানা সুইটিকে ২য় বিবাহ করে। বিবাহের পর গুলশানের একটি বাসা মাসিক ২ লক্ষ টাকায় ভাড়া করে ২য় স্ত্রীকে নিয়ে থাকা শুরু করে।
সিআইডি জানায়, এসব কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অর্থ থেকে ২য় স্ত্রীর চাহিদা মোতাবেক কোটি টাকার গহনা ও নগদ টাকাসহ প্রায় ৪ কোটি টাকা তাকে প্রদান করেছে বলে সে স্বীকার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।
কেএম/এমএমএ/