দেশের ছেলে-মেয়েরা গুগল, অ্যামাজনে চাকরি করবে: আবুবকর হানিপ
প্রকৌশল বিদ্যায় লেখাপড়া করে পাড়ি জমান সুদুর আমেরিকায়। ভেবেছিলেন সেখানে গিয়ে প্রথম সারির কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবেন। কিন্তু চিন্তাও করেননি আমেরিকায় টিকে থাকতে হলে নতুন করে পড়তে হবে শিখতে হবে। যখন কোথাও ভাল চাকরি মেলেনি তখন কম্পিউটার বিদ্যার ওপর অধিক দক্ষতা অর্জন করতে স্কিল ডেভলপমেন্ট প্রগ্রোমে ভর্তি হন। সেখানে সংগ্রামী জীবন শেষ করে পেয়ে যান স্বপ্নের চাকরি। তার এই সংগ্রামী জীবনের পেছনে সারথি হিসেবে পান আই গ্লোবাল ইউনির্ভাসিটি। সেখান থেকে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে নিজের জীবনের চাকা যেমন ঘুরিয়ে ফেলেন। তেমনি হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন বুননের অগ্রনায়ক হিসেবে দেখা দেন আবুবকর হানিপ। তিনি এখন আই গ্লোবাল ইউনির্ভাসিটির মালিক। স্বপ্ন দেখেন তার ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থীরা একদিন গুগল, টুইটার, অ্যামাজনে চাকরি করবে। নিজের সেই সংগ্রামী জীবনের কথা ও দেশের তরুন যুব সমাজের স্বপ্ন বুনন নিয়ে ঢাকাপ্রকাশ-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন আবুবকর হানিপ।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনার আই গ্লোবাল ইউনির্ভাসিটির গল্পটা যদি একটু বলেন।
আবুবকর হানিপ: চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে আমেরিকাতে যাই। ওখানে গিয়ে আমি অড জব (রেস্টুরেন্ট বা নিম্ন শ্রেণির চাকরি) করতাম। তখন আমি ভাবলাম উচ্চ শিক্ষার বিকল্প নাই। সেজন্য আমি সেখানে কম্পিউটারে মাস্টার্স করলাম। সেখানে ৪ এর উপরে জিপিএ পেয়েও যখন চাকরি পাচ্ছিলাম না। তখন আমাকে এক্সর্টা স্কিল ডেভলেপমেন্টর উপরে সময় দিতে হয়েছিল। আমি অনেকগুলো কোর্স করলাম। এক সময় আমার একটা চাকরি হলো। সেই চাকরিটা মধ্য স্তর থেকে উচ্চ স্তরের চাকরি ছিল। আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখলাম মাস্টার্স করার পরেও স্কিল ডেভলপ করেই চাকরি হলো। যখন আমি চাকরিতে ঢুকলাম তখন আমার মাথায় ঢুকল কিভাবে বাংলাদেশীদেরকে আমেরিকার মূল ধারায় আনা যায়। ততক্ষণে আমি দেখেছি অনেকে বিবিএ-মাস্টার্স করেছে কিন্তু চাকরি পায়নি, তাদের আমন্ত্রণ করলাম। এরপর তাদেরকে প্রথমে আমার অ্যাপার্টমেন্টে রেখে পড়ালাম, তারপর আমার বাসার বেইজমেনন্টে রেখে পড়ালাম। প্রায় ৩০০ মানুষকে স্কিল ডেভলপ করে আমেরিকার মেইন স্ট্রিমের জব দিতে পেরেছিলাম। যেখানে তারা বছরে ৪০,০০০ হাজার ডলার আয় করত সেখানে তাদের ৮০,০০০-২০০,০০০ ডলারের উপরে চাকরি দিতে পেরেছি। তারপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রাজ্যে আমাদের ইনস্টিটিউট চালু করলাম। এখন প্রায় ৭ হাজার এর অধিক মানুষ আমেরিকার মূল ধারায় চাকরি করছে। আমেরিকা সরকার প্রতিবছর ৬০ হাজার দক্ষ মানুষকে এইচ১বি (H1B) ক্যাটাগরির চাকরির ভিসা প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে লোক নিয়ে যায়। তাদের ওখানে কিন্তু দক্ষ লোকের চাহিদা আছে। আমার কাছে তখন মনে হয়েছে এরকম একটা পদ্ধতি যদি থাকত, সেখানে যদি দক্ষতা উন্নয়নের পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে প্রত্যেকটা লোক যারা আমাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাকরি পাবে। এজন্য খুঁজে পেলাম ‘ইনোভেটিভ গ্লোবাল ইউনির্ভাসিটি’ বা আই গ্লোবাল ইউনির্ভাসিটি।
ঢাকাপ্রকাশ: আই গ্লোবাল ইউনির্ভাসিটিতে ডিগ্রি নেওয়ার পর বাংলাদেশে বা অন্য কোন দেশে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন সুবিধা পাওয়া যায়?
আবুবকর হানিপ: আমেরিকার ডিগ্রি পৃথিবীর যে কোন জায়গায় গ্রহণযোগ্য ওখান থেকে কিউ ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরলে তার জন্য অনেক বড় বড় চাকরি অপেক্ষা করছে।
ঢাকাপ্রকাশ: আই গ্লোবাল ইউনির্ভাসিটি আমেরিকা সরকারের অনুমোদন প্রাপ্ত কি-না?
আবুবকর হানিপ: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৮ থেকে করা। এটা অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়। এটার এসিআরসি’র অনুমোদন আছে। ডিপার্টমেন্ট অব স্টেজের অনুমোদন আছে। যেটার মাধ্যমে ফ্যাকাল্টি পরিবর্তন হতে পারে। আমাদের শিক্ষার্থীরা বেশি লাভবান হবে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের ফলো করবে। আমরা ডিগ্রি দিচ্ছি পাশাপাশি দক্ষতা শেখাচ্ছি।
ঢাকাপ্রকাশ: আই গ্লোবাল ইউনির্ভাসিটির কতজন শিক্ষার্থী আমেরিকার ভিসা পেয়েছে?
আবুবকর হানিপ: বর্তমান কোয়ার্টারে বাংলাদেশ থেকে ৪০ জন ভিসা পেয়েছে। যেটা অক্টোবর থেকে শুরু হলো। জানুয়ারি থেকে যেটা শুরু হয়েছে এরইমধ্যে ৯০ জন ভিসা পেয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি ১৫০ ছাড়িয়ে যাবে। এটা শুধু বাংলাদেশের এছাড়া পৃথিবীর ১০০ টা দেশ থেকে আমাদের শিক্ষার্থী আসে। প্রায় ৬০০ এর মতো শিক্ষার্থী আছে। এছাড়া স্থানীয় শিক্ষার্থীরা আছে। আমেরিকার গ্রিন কার্ড যারা পাবে তাদের সহায়তা করা হবে।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনি কি স্বপ্ন দেখেন আপনার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গুগল, টুইটারে, অ্যামাজনে চাকরি করবে?
আবুবকর হানিপ: এটা তো হবেই। সে কারণেই আমার উদ্দেশ্য এখান থেকে যদি মেধাবী শিক্ষার্থী নিতে পারি। এদের যদি পরিচর্যা করতে পারি। তাহলে এরা আমেরিকার মূল ধারায় ফরচুন-১ কোম্পানিগুলোতে চাকরি করতে পারবে। সেই স্বপ্ন তো অবশ্যই দেখি। দেশে প্রাইভেট এবং পাবলিকসহ প্রায় ১৬২ টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তারমধ্যে ৫২টি হলো পাবলিক আর ১০৮ টি হলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আর দুইটা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস রয়েছে। এসকল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে দক্ষতা উন্নয়ন হয়, তারা যাতে আমার পদ্ধতি অনুসরণ করে তারাও উপকৃত হতে পারে। আমি সহযোগিতা করব। সবার সঙ্গে কাজ করব। প্রতি বছর অসংখ্য শিক্ষার্থী বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে। সবারই লক্ষ্য থাকে সরকারি চাকরি। সবাই তো পায় না। দেখা যায় ডাক্তারি পরে পুলিশ অফিসার, ইঞ্জিনিয়ারিং চলে যাচ্ছে ফরেন ক্যাডারে। এদের যদি পরিপূর্ণভাবে দক্ষ করা যায় তাহলে যে সকল সাবজেক্টের চাহিদা রয়েছে সেগুলোর উপর দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমি স্বপ্ন দেখি একদিন আমার দেশের ছেলেরা ফরচুন-১ কোম্পানিগুলোতে চাকরি করবে।
ঢাকাপ্রকাশ: দীর্ঘক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আবুবকর হানিপ: আপনাকেও ধন্যবাদ।
/এএস