এরাজমাস মান্ডেজের ইইউ প্রতিনিধিদের নিয়ে কর্মশালা করলো সিসিডিসি
‘রাজশাহী ইউনির্ভাসিটি ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিসিডিসি)’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর দেওয়া 'এরাজমাস মান্ডেজ’ নামের বিশ্বখ্যাত পূর্ণকালীন বৃত্তিটির নিয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সম্পর্কে অবহিতকরণ কর্মশালা করেছে।
আজ ২৬ সেপ্টেম্বর, সোমবার, সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের 'এরাজমাস মান্ডেজ’ শিক্ষা-গবেষণা প্রতিনিধি দলের প্রধান চার্লস হুইটলি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনে এর আগে উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের সঙ্গে আলোচনা সভা করেছেন।
তারা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে পারস্পরিক আগ্রহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একমত হয়েছেন।
বেলা ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের বহুল আকাংখিত ও প্রাপ্ত বৃত্তিটির কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া বৃত্তিটির অবহিতকরণ সেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিনিধি দলের প্রধান চার্লস হুইটলি। তিনি বলেছেন, “আমাদের 'এরাজমাস মান্ডেজ’ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম বৃত্তি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য সবচেয়ে ভালো কর্মসূচি। ফলে বিশ্বের নানা দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থাগুলোতে শিক্ষা এবং গবেষণার সুযোগ লাভ করেন। 'এরাজমাস মান্ডেজ’-এ আপনাদের বাংলাদেশ থেকে এবার ১৫১ জন শিক্ষার্থী ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া ও গবেষণা করতে যাচ্ছেন। এই সংখ্যা বিশ্বে তৃতীয়। অতীত থেকে বাংলাদেশ ইউরোপের উন্নয়নকর্মী ও দাতা সংস্থা এবং দেশগুলোর কাছে নানা দূর্যোগ পীড়িত দেশ। তবে এখন বাংলাদেশে যে মহা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে তার পাশাপাশি এই বৃত্তিপ্রাপ্তদের মাধ্যমেও ইউরোপে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে তা আরো বাড়বে বলে আমি আশা করি। আমাদের 'এরাজমাস মান্ডেজ’ কর্মসূচি সফলতার কারণে প্রতি বছর আওতা ও পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমানে শিক্ষা, জলবায়ু পরবর্তন ও রোবোটিক্সে বিস্তৃত হয়েছে। এই শিক্ষা কর্মসূচিতে ভালো ও কার্যকর বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশী সেরা শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছেন এবং তারা আরো সফল হচ্ছেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য এই বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানো হবে।”
সিসিডিসি’র 'এরাজমাস মান্ডেজ’ বৃত্তি কর্মশালায় সভাপতি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক. গোলাম সাব্বির সাত্তার। তিনি উপস্থিত ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান চার্লস হুইটলিসহ সবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ‘বর্তমান তথ্য প্রযুক্তিনিভর ও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত বিশ্বে পারস্পরিক সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপের দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে জ্ঞান ও সহযোগিতা বাড়াতে উদ্যোগটি অন্যতম হিসেবে গ্রহণ করল। আমাদের সঙ্গে আজকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিরাও আছেন।’
তিনি তাদের বলেছেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মেধাবী ও যোগ্য। তারা তাদের জ্ঞান ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা ও গবেষণা করে অনেক বাড়াতে পারবে। জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও উদ্ভাবন হয়। তারা নব ভুবনে অবদান রাখতে পারবে। এজন্য আমি বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অফিসের আরো সহযোগিতাও কামনা করি।’
মিশ্রিত শিক্ষাপদ্ধতির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউ’র বিশ্ববিদ্যালগুলোর আরো সংযোগের প্রতি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘বিশ্ব এখন উন্মুক্ত, তাই সবার উচিত উন্মুক্ততার সুযোগগুলো গ্রহণ।’
বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান -উল ইসলাম বলেছেন, “আমাদের গবেষক, শিক্ষার্থী ও অধ্যাপকরা আজকের আয়োজন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর নামকরা বৃত্তি কর্মসূচিটির আওতায় উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারছেন ও সুবিধাগুলো তারা গ্রহণ করছেন।’
তিনিও উল্লেখ করেছেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বিশ্ব আজ গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। এ কারণে বিশ্বের কোনো এক দেশে সমস্যা হলে তা অন্য অংশের মানুষদেরও প্রভাবিত করে। কেউ জ্ঞান লাভ করলে অন্যরাও অংশীদার হন। বর্তমান বিশ্বের পরিবেশজনিত সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন ও তদ্জনিত বিপর্যয়। ফলে নারী, শিশু, ও বৃদ্ধ এবং গরীবরা প্রবলভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন ‘গবেষণা’। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হলে গবেষণায় সমাধানের পথগুলো বেরিয়ে আসবে। আমি অধ্যাপক, গবেষক এবং শিক্ষার্থীদেরকেও এগিয়ে আসার আহবান জানাই।”
ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র দিয়ে মানুষকে চিহ্নিত না করে, সমান অধিকারের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে, বলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম। এই আয়োজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং গবেষকরা ইইউভুক্ত উন্নত দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য লাভ করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। অ্যাকাডেমিক উপ-উপাচার্য দীর্ঘ মেয়াদে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
প্রসঙ্গত, আজকের কর্মশালায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩শ গবেষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক অংশ অংশগ্রহণ করেছেন।
অন্যদের মধ্যে আয়োজনে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম. আসাবুল হক, সিসিডিসি’র সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসেন, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, অনুষদীয় ডিন, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট পরিচালক ও সংশ্লিষ্টরা অংশগ্রহণ করেছেন।
তারা জানিয়েছেন, 'এরাজমাস মান্ডেজ’ নিয়ে তথ্যবহুল সেশনটির মাধ্যমে অনার্স ও মাস্টার্স লেভেল এবং গবেষণায়রত নামকরা ছাত্র, ছাত্রীরা পূর্ণ জ্ঞান লাভ করেছেন।
তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে পারস্পারিক যোগযোগ কাযক্রমে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার সুযোগ লাভ করবে বলে জানিয়েছে রাজশাহী ইউনিভাসিটি ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার।
লেখা ও ছবি : আসাদুল্লাহ গালিব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
ওএফএস।