রাজধানীর শব্দ সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের দাবিতে মানববন্ধন
রাজধানী ঢাকা এখন শব্দ দূষণের শহরে পরিণত হয়েছে। স্বাভাবিক বা সহনীয় শব্দের মাত্রা ৫৫ থেকে ৬০ ডেসিবেল। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবেলের অধিক শব্দ যদি দীর্ঘসময় ধরে থাকে তাহলে সাময়িক বধিরতা আর ১০০ ডেসিবেলের বেশি হলে স্থায়ী বধিরতা হতে পারে। রাজধানীতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় শব্দ দূষণ এখন শব্দ সন্ত্রাসে পরিণত হয়েছে। এ দূষণের প্রধান উৎস বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, টেম্পো, অটো রিক্সা, মোটরসাইকেল সহ বিভিন্ন যানবাহনের হাইড্রলিক হর্ন। এসব যানবাহনের হর্ণের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং শব্দ সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘শব্দ সন্ত্রাস বাসযোগ্য নগরী ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ; শব্দ সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’ শীর্ষক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) সহ সমমনা ১২ সংগঠনের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদ, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ, বিডি ক্লিক, জাতীয় সচেতন ফাউন্ডেশন (জাসফা), বানিপা, মৃত্তিকা, পরিস্কার ঢাকা, গ্রিনফোর্স, ওল্ড ঢাকা কমিউনিটি প্রভৃতি।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান-এর সভাপতিত্বে উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ’র সভাপতি আমির হাসান মাসুদ, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ এর সভাপতি নাজিমউদ্দীন, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মো: মুসা, বানিপা এর সভাপতি প্রকৌ. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, মৃত্তিকা’র সমন্বয়ক খাদিজা খানম, জাতীয় সচেতন ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনির, পরিষ্কার ঢাকা এর সমন্বয়ক মো. শাহজাহান, ওল্ড ঢাকা কমিউনিটি’র সভাপতি মো: আব্দুল্লাহ, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রে’র সদস্য শাহিন ইসলাম প্রমুখ।
কর্মসূচি থেকে কয়েকটি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো:
১. শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা জরুরি বাস্তবায়নেপ পরিবেশ অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সময় ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
২. শব্দ দূষণকারী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিতকরণ, শব্দ সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ এবং দায়ীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা।
৩. মোটরযান মালিক ও ড্রাইভারদের উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী হর্ণ ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
৪. মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণহীন গতিবেগ ও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
৫. উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী জেনারেটর, হর্ণ, যন্ত্রপাতি আমদানি ও ব্যবহার বন্ধ করা।
৬. বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনগণকে শব্দ দূষণের অপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা।
৭. শব্দ দূষণের প্রকোপ কমাতে হলে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে প্রত্যেককে শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংযমী হওয়া।
৮. আবাসিক এলাকার শেষ সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ কাজের জন্য ইট বা পাথর ভাঙার মেশিন ব্যবহার না করা।
৯. বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক বা অন্য কোনো ধরনের সভা সমাবেশের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সাউট সিস্টেম যেন শব্দের মাত্রা অতিক্রম না করে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এপি/এএস