শহিদ মিনার আছে শ্রদ্ধাঞ্জলি নেই
শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছে দেশবাসী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ভাসমান শহিদ মিনার থাকলেও আজিমপুর লালবাগ এলাকায় কোনো অস্থায়ী শহিদ মিনার চোখে পড়েনি।
আজ সোমবার (২১ ফ্রেব্রুয়ারি) আজিমপুর লালবাগ এলাকার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে কোন শহিদ মিনার পাওয়া যায়নি।
তবে আজিমপুর অফিসার্স স্টাফ কোয়ার্টারের মধ্যে একটি শহিদ মিনারের ভিত্তিস্থাপন চোখে পড়ে। শহিদ মিনারটির ভিত্তিস্থাপন করেন আজিমপুর এস্টেট জনকল্যাণ সমিতি। তবে এ শহিদ মিনারে কোনো পুষ্পস্তবক অর্পণ অথবা শ্রদ্ধাঞ্জলি কিছুই পড়েনি। তা ছাড়া এটি তালাবদ্ধ রয়েছে।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, প্রতিবার কলোনির মধ্যে অস্থায়ী শহিদ মিনার স্থাপন করা হয় এবং শহিদ মিনারের তালা খুলে দেওয়া হয়; কিন্তু এবার হয়তো করোনাভাইরাসের কারণে কোনো অস্থায়ী শহিদ মিনার স্থাপন করা হয়নি।
জানা গেছে, এ শহিদ মিনারটি স্থাপন করেছেন আজিমপুর এস্টেট জনকল্যাণ সমিতি এখানে সমিতির পক্ষ থেকেও পুষ্প অর্পণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়নি। তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কেউ মন্তব্য করতে চায়নি।
এই শহিদ মিনারের পাশে স্থানীয় দোকানদার কালাম হোসেনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়েছি; কিন্তু আমার দোকানের সামনে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদদের একটি মিনার রয়েছে এখানে শ্রদ্ধা জানাতে পারিনি। কারণ এটা তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে।’
অফিসার্স কলোনিতে বসবাসরত রনি মিয়া বলেন, ‘প্রতিবার এ শহিদ মিনারের তালা খুলে দেওয়া হয় কিন্তু এবার কর্তৃপক্ষ কেনো খুলে দেয়নি সেটা বলতে পারছি না।’ এবার শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিবার এখানে শ্রদ্ধা জানাই কিন্তু এবার জানানো হয়নি।’
কথা হয় আজিমপুর অফিসার্স কলোনীর স্টাফ সাহা আজমের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারীতে আমাদের কোয়াটারের ছেলেমেয়েরা মাঠে অস্থায়ী শহিদ মিনার স্থাপন করে কিন্তু এবার কেন করেনি সেটা আমার জানা নাই।’
আজিমপুরে এস্টেট জনকল্যাণ সমিতির পাশে ডিউটিরত ফাঁড়ির ইনচার্জ দেলোয়ার বলেন, ‘এই শহিদ মিনার তো তালাবদ্ধ। তা ছাড়া পাশে যেহেতু কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এজন্য হয়তো কেউ এখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায়নি। তবে এবার আজিমপুর এলাকায় কোন অস্থায়ী শহিদ মিনার তৈরি হয়নি। যদি কেউ তৈরি না করে তাহলে শহিদ মিনার কিভাবে হবে।’
এদিকে আজিমপুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টাফ কোয়ার্টারে প্রতিবার অস্থায়ী শহিদ মিনার তৈরি করা হয়; কিন্তু এবার পুলিশি নিষেধাজ্ঞার কারণে এ ভাসমান শহিদ মিনার তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মহল্লার জাহাঙ্গীর নামের এক তরুণ।
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘স্টাফ কোয়ার্টারে এবার পুলিশ আমাদের অস্থায়ী শহিদ মিনার স্থাপন করতে দেয়নি। তারা নাকি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে, আমরা শহিদ মিনার স্থাপন করে তাদের পরিবেশ নষ্ট করি।’
আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টারের দারোয়ান অলি বলেন, ‘প্রতিবছর তো একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আমাদের এখানে শহিদ মিনার করা হয় কিন্তু এবার মহল্লার লোকজন শহিদ মিনার স্থাপন না করে ভিতরে প্রভাব খাটিয়ে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করেছে।’
জানতে চাইলে লালবাগ থানার ওসি এম এ মোর্শেদ বলেন, ‘আমাদের এলাকায় মোট স্কুল-কলেজে পাঁচটি শহিদ মিনার রয়েছে, অস্থায়ী তেমন শহিদ মিনার হয়নি।’
সরকারি কোয়ার্টারে শহিদ মিনার করতে পুলিশ বাধা দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমন বিষয়ে আমার জানা নাই। তবে এবার করোনাকালে লালবাগ এলাকায় পাঁচটি শহিদ মিনার ছাড়া আর কোন শহিদ মিনার তৈরি করা হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজিমপুর ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে হয়তো এবার অস্থায়ী শহিদ মিনার তৈরি হয়নি। তবে আমাদের পাড়া মহল্লার ছেলেমেয়েরা প্রতিবার এলাকার বিভিন্ন জায়গায় রাস্তাঘাটে শহিদ মিনার স্থাপন করে। সরকারিভাবে বিধিনিষেধ থাকায় হয়তো অনেকে শহিদ মিনার তৈরি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি।’
আপনার এলাকার আজিমপুর অফিসার্স কোয়াটারে একটি এস্টেট জনকল্যাণ সমিতির শহিদ মিনার রয়েছে, এটি বন্ধ কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা হয়তো কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে রেখেছে। এ বিষয়টি আমি জানতে চাইব।’
কেএম/এসএ/