নিরাপত্তার চাদরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহিদ মিনার এলাকা নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে ফেলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাবের সরব উপস্থিতি রয়েছে শহিদ মিনারের আশপাশে। এদিকে নিরাপত্তার জন্য শহিদ মিনারের আশেপাশের রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবার একুশের প্রথম প্রহরে ১২টা ১ মিনিটে সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর পরপরই শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এবার করোনা ভাইরাসের কারণে হয়তো রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরা আসতে পারেন আবার নাও আসতে পারেন। তবে সব কিছু বিবেচনায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শহিদ মিনারে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে।
২১ শে ফেব্রুয়ারি পালন নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আর্চওয়ে, সিসিটিভি ক্যামেরা, পেট্রোলিং ব্যবস্থা, চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি, ওয়াচ টাওয়ার ও ডগ স্কোয়াড। এছাড়া রায়ট কার ও এপিসি কারও প্রস্তুত থাকবে।
নিরাপত্তার ঘাটতি বলতে কোনো কিছু রাখেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চলাচল নির্বিঘ্ন করতে শহিদ মিনারের আশেপাশের সড়কে যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। ডিবি পুলিশ, এসবি, সিআইডি ও র্যাবের সদস্যরাও নিরাপত্তা রক্ষার কাজ করবেন।
একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলার কোনো সুনির্দিষ্ট হুমকি নেই বলে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, শহিদ মিনারে ৬ স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি থাকবে না। ইউনিফর্ম সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এর পাশাপাশি বোম ডিজপোজাল ইউনিট, ডিবি, র্যাব ও সোয়াট টিম দায়িত্ব পালন করবেন। সবার সমন্বয়ে ছয় স্তরের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য র্যাবের পক্ষ থেকেও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বোম ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াডের পাশাপাশি র্যাবের গোয়েন্দারাও কাজ করবেন। তাছাড়া ভার্চুয়াল মাধ্যমেও সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হবে।
তিনি বলেন, ঢাকার অভ্যন্তরে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২২ উপলক্ষে পেট্রোল টিম থাকবে ৩২৩টি। এজন্য ১ হাজার ২২২ র্যাব সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। ঢাকার বাইরে পেট্রোল টিম ৩৭৭টি। ১ হাজার ৬০৪ র্যাব সদস্য সারা দেশে মোতায়েন থাকবে। সর্বমোট ৭০০ পেট্রোল টিম এবং জনবল নিয়োজিত থাকবে ২ হাজার ৮২৬ জন। চারটি বোম্ ও ডগ সুইপিং টিম সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায়। বিশেষ নজরদারি, গোয়েন্দা কার্যক্রম ও স্পেশাল অ্যাকশনের জন্য প্রস্তুত থাকবেন ২৫৪ জনের চৌকস দল।
তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২২ উপলক্ষে মোতায়েন থাকবে পিকআপ (ভিভিআইপি স্কর্ট) ও মোটরসাইকেল পেট্রোল ৫৬টি। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলায় স্থাপন করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। পুরো এলাকায় সিসিটিভি ও এলইডি প্যানেল থাকছে ৫১টি। অবজারভেশন পোস্ট থাকছে দুটি। তাছাড়া সারা দেশে যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো প্রয়োজনে তথ্য বা সমস্যায় র্যাবের নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। র্যাব সদর দপ্তরের নম্বর ০১৭৭৭৭২০০২৯।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ভিআইপি এবং সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবে হয়রানির শিকার না হন সেই সব বিষয় মাথায় রেখে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মিডিয়া হাফিজ আল আসাদ বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ৬ স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং গতকাল থেকেই শহিদ মিনারের আশেপাশের এলাকার ম্যাচ এবং বাসাবাড়িতে পুলিশের তল্লাশি অভিযান চলমান রয়েছে। তাছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলার করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, র্যাবের পক্ষ থেকে সারা দেশে অসংখ্য গোয়েন্দা মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটা এলাকার শহিদ মিনার র্যাবের নজরদারিতে থাকবে যাতে আইন-শৃঙ্খলার কোনো অবনতি না ঘটে। সে বিষয় লক্ষ্য রেখে আমরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছি।
প্রসঙ্গত, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু ভাষা শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয় না। সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও ভাষা শহিদদের যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয়ে থাকে। ১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর এই দিনটিকে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো)।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ তৎকালীন শাসক গোষ্ঠীর ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসেন। সেই ছাত্র-জনতার মিছিলে পাকিস্তানি পেটোয়া বাহিনী-পুলিশের গুলিতে রাজপথে লুটিয়ে পড়েন সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ আরও অনেকে। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের মাতৃভাষা হিসেবে বাংলাকে পেয়েছি। সেই শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। তাদের জন্যই আমরা বাংলায় কথা বলতে পারি।
কেএম/এএস