ফার্মেসিতে নারীর ৬ টুকরা মরদেহ
চিকিৎসা নিতে যাওয়াই ‘কাল’ হয়েছে জোৎস্নার
সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানা এলাকার একটি ওষুধের দোকানে শাহনাজ পারভীন জোৎস্না নামে (৩৫) এক নারীর ছয় টুকরা লাশের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
গ্রেপ্তাররা হলেন─ জিতেশ চন্দ্র গোপ, অনজিৎ চন্দ্র গোপ, অসীত গোপ।
সিআইডি জানায়, মূলত জোৎস্না চিকিৎসা নিতে এসে ধর্ষণের শিকার হন। পরে ঘাতকরা তাকে খুনের পর লাশটি ধারালো ছুরি দিয়ে ছয় টুকরা করেন। এরপর তারা সুবিধাজনক সময়ে লাশের খণ্ডিত অংশগুলো মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
নিহত জোৎস্নার স্বামী সৌদি প্রবাসী। পরকীয়ার কারণে হয়তো এমন ঘটনা ঘটেছে এমন ধারণা করা হয়। ঘটনার পর সিআইডির এলআইসি শাখা তদন্ত শুরু করে। এরপর বিশেষ অভিযান চালিয়ে গতকাল শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার নুরের চালা থেকে ঘাতকদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মুক্তা ধর বলেন, এ ঘটনায় বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য যাচাই-বাছাই করে ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জিতেশ চন্দ্র গোপ, অনজিৎ চন্দ্র গোপ, অসীত গোপকে পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা খুনের দায় স্বীকার করেছেন। তারা জানিয়েছেন, জ্যোৎস্না ২০১৩ সাল থেকে পৌর শহরের নিজ বাসায় ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তার স্বামী ছরকু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে রয়েছেন। পরিবারের সব সদস্যদের ওষুধ জিতেশের ফার্মেসি থেকে কেনার সুবাদে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর কিছুদিন ধরে জোৎস্না বেশ কিছু গোপনীয় শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ওই সমস্যার সমাধানের জন্য পরামর্শ নিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকালের দিকে জিতেশের ফার্মেসিতে আসেন তিনি। এরপর অভিযুক্তরা ফার্মেসির ভেতরে প্রাথমিক চিকিৎসা কক্ষে তাকে বসিয়ে রাখেন এবং কাস্টমারের ভিড় কমলে তার সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের জন্য সঠিক ওষুধ দেওয়া হবে বলে সময়ক্ষেপণ করেন।
রাত যত গভীর হয়, জোৎস্নার বাসায় ফেরার অস্থিরতা বেড়ে যায়। এদিকে এ ঘটনার মূল আসামি জিতেশ তার বন্ধু মুদির দোকানদার অনজিৎ গোপ ও পাশের ফার্মেসির মালিক অসীতকে জোৎস্নার বিষয়ে বললে তারা জোৎস্নাকে ধর্ষণ করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযুক্ত জিতেশ ভিকটিমকে তার চিকিৎসার কথা বলে ঘুমের ওষুধ খাওয়ালে তিনি সেখানেই ঘুমে পড়েন।
মুক্তা আরও ধর বলেন, এরপর জোৎস্নাকে ফার্মেসির ভেতর রেখেই ঘাতকরা তালা দিয়ে চলে যান। আশপাশের সব দোকান বন্ধ হলে গভীর রাতে তারা ফার্মেসি খুলে ভিকটিমকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।
সিআইডি জানায়, এ বিষয়টি জোৎস্না তার পরিবারের সদস্য ও অন্যান্যদের কাছে প্রকাশ করার কথা বললে, অভিযুক্তরা তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী তারা ভিকটিমের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ও বালিশ দিয়ে মুখে চেপে ধরে তাকে হত্যা করেন।
এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর আরও বলেন, লাশটি ধারালো ছুরি দিয়ে মাথা, দুই হাত, দুই পা এবং বুক ও পেটসহ ৬টি অংশে বিভক্ত করে ফেলেন তারা। এরপর দোকানে থাকা ওষুধের কার্টুন দিয়ে খণ্ডিত অংশগুলো ঢেকে রেখে ফার্মেসি তালা দিয়ে তারা চলে যান। পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে লাশের খণ্ডিত অংশগুলো মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন ঘাতকরা।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ভাই হেলাল আহমদ (৫০) জিতেশ চন্দ্র গোপের (৩০) বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানায় একটি মামলা করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাটি সিআইডি আমলে নিয়ে কাজ করে। এরপর এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামিদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়।
মুক্তা ধর বলেন, এমন একটি মামলার রহস্য উদঘাটন করা সিআইডি পুলিশের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কেএম/আরএ/