টার্গেট থেকে ১৮ মাস পিছিয়ে গেছি: মেয়র আতিক
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম
নির্বাচনের আগে নগরবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আলোকিত ঢাকা গড়বেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কতদূর। এসব বিষয়ে ঢাকাপ্রকাশকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘টার্গেট থেকে আঠারো মাস পিছিয়ে গেছি।’ পুরো সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিচে তুলে ধরা হলো:
ঢাকাপ্রকাশ: আপনি নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আলোকিত ঢাকা গড়বেন, সেই প্রতিশ্রুতি কতটুক বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন?
আতিকুল ইসলাম: প্রথমবার আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন মূলত এটা মরা প্রকল্প ছিল। আমি ২০১৯ সালে ৯ মাসের জন্য যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন কাজ শুরু করি। এটাকে কিভাবে আবার ফাইলগুলো উঠিয়ে চালু করে আলোকিত শহর করা যায় সেই পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। ডিএনসিসি এলাকায় ৪৬ হাজার লাইট বসানোর কথা ছিল। এরইমধ্যে ২৬ হাজার লাইট লাগিয়ে ফেলেছি। বাকি লাইটগুলো আশাকরি এই বছরের মধ্যে শেষ করতে পারব। এই লাইটগুলোত ইউরোপের। করোনার কারণে ইউরোপে ১৮ মাস সব ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ ছিল। তাছাড়া ঢাকা শহরেও সব কিছু বন্ধ ছিল। আমাদের পরিকল্পনা ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ করা। আশাকরি ৪৬ হাজার লাইটের বাকিগুলো দ্রুতই চলে আসবে। এই বছরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হয়ে যাবে। টার্গেট ছিল ২০২১ সালে শেষ করা। করোনার কারণে ১৮ মাস টার্গেট থেকে পিছিয়ে গেছি। তারপরও লাইটগুলো যদি জাহাজে আসত তাতে কিন্তু আরও একবছর সময় বেশি লাগত। যেকারণে সবগুলো লাইট আকাশপথে আসছে। তবে এরইমধ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শেখেরটেক, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ এর সুফল পাচ্ছে।
ঢাকাপ্রকাশ: আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম না চালাতে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। আপনারাও নতুন করে লাইসেন্স দিচ্ছেন না, কিন্তু যেগুলো আছে সেগুলোর কি হবে?
আতিকুল ইসলাম: আমি ব্যক্তিগতভাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বলেছি আমাদের গুলশান, বনানীসহ অনেক আবাসিক এলাকায় প্রায় ৫ হাজার ৬০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো থেকে আমরা কোনো রাজস্ব পাচ্ছি না। তারা ব্যবসা করছে কিন্তু আমরা ট্রেড লাইসেন্স দিতে পারছি না। এতে আমাদের বড় ধরনের রাজস্ব হারাচ্ছি। আমরা সিদ্ধান্তের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর চাহিদাপত্র ‘ডিও’ পাঠিয়েছি। একটি সিদ্ধান্তে অবশ্যই আসতে হবে। যদি সিদ্ধান্ত না হয় তাহলে তো তাদের ব্যবসা করতে দেব না। আর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে ট্রেড লাইসেন্সসহ সব ফি দিতে হবে। আশাকরি হয়তো খুব শিগগিরই সমাধান চলে আসবে।
ঢাকাপ্রকাশ: সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তাহলে কি আগের মতই চলবে?
আতিকুল ইসলাম: চলছেই তো। এখানে রাজউক তো কিছু করতে পারছে না। আমার সিটিতে ব্যবসা করছে আমি কিছু দিতে পারছি না। কারণ হাইকোর্ট থেকে আদেশ আছে আবাসিক এলাকায় কোনো ধরনের ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করতে পারব না।
ঢাকাপ্রকাশ: প্রধানমন্ত্রী একনেক বৈঠকে একটা অনুশাসন দিয়েছেন যে, সিটি করপোরেশনের গাড়িতে আর কোনো মানুষ যেন মারা না যায়, সেটা তিনি দেখতে চান না।
আতিকুল ইসলাম: আমাদের বোর্ড সভায় আলাপ হয়েছে। সিটি করপোরেশনের যারা গাড়ি চালাত তাদের অনেকেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তবুও তারা গাড়ি চালাত। এটি একদিন বা এক মাসের সমস্যা না, যুগ যুগ থেকে এটা হয়ে আসছে। অর্থাৎ যারা সিটি করপোরেশনের গাড়ি চালাত তাদের মধ্যে প্রায় ২৪ জন কোনো স্টাফই না সিটি করপোরেশনের। এরপর আরও আছে আউট সোর্সিং। নতুন এলাকার জন্য আমাদের যে অর্গানোগ্রাম, সেখানে ড্রাইভার লাগবে এটা যুক্ত করে দিয়েছি। আমরা হাল্কা থেকে ভারী লাইসেন্স প্রদানের জন্য বিআরটিএকে বলেছি। আমাদের গাড়ির রেজিস্ট্রেশনও ছিল না। অনেক অনিয়ম যেমন ছিল তেমনি চ্যালেঞ্জও ছিল। চ্যালেঞ্জ এখনও আছে। আমরা এখন সেই চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবিলা করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করছি। এখন দিনের বেলায় সিটি করপোরেশনের ৯০ ভাগ গাড়ি চলে না। রাতের বেলায় চলে। প্রধানমন্ত্রীর যে অনুশাসন দিয়েছেন সেটা মাথায় রেখে কাজ করছি। বছরে একবার বিআরটিএতে গিয়ে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। শুধু ড্রাইভার না, সবার উচিত প্রশিক্ষণ নেওয়া। পথচারীদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
ঢাকাপ্রকাশ: দীর্ঘক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আতিকুল ইসলাম: ঢাকাপ্রকাশ ও ঢাকাপ্রকাশের সব পাঠকদের ধন্যবাদ।
এসএম/আরএ