ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া বর্বরোচিত বিচ্ছিন্নতাবাদী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ব্রিকস সংসদীয় ফোরাম। শুধু নিন্দাই নয়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ফোরামের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। এই প্রেক্ষাপটে চীন ও ইরানের অবস্থান বিশেষভাবে দৃষ্টি কেড়েছে, কারণ এই দুই দেশ ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এই অবস্থান পাকিস্তানের উপর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়ে তুলছে।
সম্প্রতি ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় ব্রিকসের ১১তম সংসদীয় ফোরাম, যেখানে অংশ নেয় ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, ইথিওপিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া। ভারতের লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে পহেলগাঁও হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং সন্ত্রাস মোকাবেলায় ভারতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওম বিড়লা বলেন, “সন্ত্রাস দমনে গোয়েন্দা তথ্যের আদান-প্রদান, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও বলেন, “ব্রিকস প্ল্যাটফর্মকে বিশ্ব শান্তি ও মানবকল্যাণের জন্য ব্যবহার করা উচিত।”
দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতার ওপরও বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় ২০২৬ সালে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য ১২তম ব্রিকস সংসদীয় ফোরামের সভাপতি হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন ওম বিড়লা।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকায় ঘটে যাওয়া হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটক নিহত হন। হামলাকারীরা ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড চালায়। এই হামলার জবাবে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত নয়টি ঘাঁটি ধ্বংস করে এবং শতাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদীকে হত্যা করে। এর পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে।
ভারতের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই হামলায় ব্যবহৃত ড্রোন ও অস্ত্র চীনে তৈরি। এ নিয়ে দিল্লি চীনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে পরোক্ষ সহযোগিতার অভিযোগ তোলে। তবে ব্রিকস ফোরামে চীন যেভাবে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে, তা চীন-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন আলো ফেলছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা। চীনের এই অবস্থান পাকিস্তানের জন্য কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।