বাবার লাশ রেখে সম্পত্তি ভাগাভাগি!
মরদেহে পচন ধরায় এলাকাবাসী চাঁদা তুলে শীতাতপ অ্যাম্বুলেন্সে রাখে। আর সন্তানরা ব্যস্ত সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে। তারই জের ধরে বাবার মরদেহ দাফন করতে চাইছেন না ছোট ছেলে।
২৪ ঘণ্টা পড়েছিল বাবার মরদেহ। এদিকে, ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে চলছিল সন্তানদের মধ্যে লড়াই। ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায়। এ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে খুব আলোচনা-সমালোচনা।
মৃত ওই ব্যক্তির নাম ফিরোজ ভুইয়া। তার বড় ছেলের নাম রাকিব ভুইয়া, ছোট ছেলের নাম আবির ভূঁইয়া। মৃতের স্ত্রীর নাম খাদিজা। শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ২৪ ঘণ্টা পার হলেও সন্ধ্যায় ও বাড়ির নিচ পড়েছিল তার মরদেহ।
ঘটনাটি জানাজানি হলে পুলিশের উপস্থিতিতে জানাজা ও মরদেহের দাফন সম্পন্ন হয়। তবে এ ঘটনায় পরিবারের সংশ্লিষ্ট কেউ থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। মৃতের স্ত্রী আর বড় সন্তানের অভিযোগ,সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে ফিরোজ ভূইয়াকে হত্যা করেছে তার ছোট ছেলে আবির।
এদিকে আবিরের উপর মায়ের অভিযোগ তার স্বামীকে কোনো যন্ত্র দিয়ে, অথবা কোনো ওষুধ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার পর বাড়ি জুড়ে ছিল না কোনো শোকের ছায়া। মৃতের পাশে ছিল না কোনো স্বজনের উপস্থিতি।
নিচ তলায় যখন তার মরদেহ ছিল, বাড়ির ওপরের তলায় চলছিল সম্পত্তি নিয়ে দুই সন্তানের বিবাদ। সালিশে বসেছে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানান, ফিরোজ ভূইয়ার বড় ছেলে রাকিব ভুইয়া কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। তার অভিযোগ সম্পত্তির লোভে বাবাকে হত্যা করেছে ছোট ভাই আবির। বিষয়টি এলাকাবাসী মীমাংসা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
এদিকে বড় ছেলে রাকিব ভুইয়ার অভিযোগ, বাড্ডার পাঁচ তলা বাড়ি ও বাবা-মায়ের অবসরের এক কোটি টাকা এবং নরসিংদীর আরও একটি বাড়ি নিজের নামে লিখে নিয়েছেন ছোট ভাই। এরপরও তিনি শান্ত হননি। তিনিই বাবাকে হত্যা করেছেন। আবিরের মায়ের অভিযোগ ছোট ছেলে তাদের নির্যাতন করতেন।
স্থানীয়রা জানান, স্বামীর মরদেহ রেখে সন্তানের নির্যাতনের ভয়ে স্ত্রী খাদিজা প্রতিবেশীদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ছোট ছেলে আবির ভূইয়ার নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁপে উঠছিলেন অসহায় মা। অথচ, অভিযুক্ত ছোট ছেলে আবির এলাকাবাসীকে জানান, বাবা তাকে স্বেচ্ছায় সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, আমাদের থানায় স্থানীয় কিছু মানুষ অভিযোগ করেন যে, দুদিন ধরে একটি মরদেহ পড়ে আছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশের সহায়তায় মরদেহের প্রথম জানাজা হয় এবং পরে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। তবে এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারে থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি।
তিনি বলেন, যদি পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ করেন তাহলে বিষয়টি আমলে নিয়ে কাজ করবে পুলিশ।
কেএমএইচ/এসএন