বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির অভিযোগে দুটি স্টল বন্ধ

ছবি: সংগৃহীত
অমর একুশে বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদর্শন ও বিক্রির কারণে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের দুটি স্টল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ইসলামপন্থি কিছু গোষ্ঠীর আপত্তি এবং মব সংস্কৃতির ভয়ে বাংলা একাডেমি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। এ ঘটনায় নেটিজেনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং বাংলা একাডেমির এমন সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানিয়েছেন।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা গেছে, বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মুক্তমঞ্চের পাশে অবস্থিত স্টল দুটি কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য ব্র্যান্ড স্টে-সেইফ বইমেলায় এই স্টল দুটি পরিচালনা করছিল।
এ নিয়ে মেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ড্রিমার ডংকি প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি পাঠান। সেখানে উল্লেখ করা হয়, শুরুতে কোনো সমস্যা না থাকলেও ১১ ফেব্রুয়ারির পর কিছু ইসলামপন্থি গ্রুপ স্যানিটারি ন্যাপকিনকে 'গোপন পণ্য' আখ্যা দিয়ে এর প্রকাশ্য বিক্রি বন্ধের দাবি জানায়। পরদিন আরও অনেকে একই দাবিতে এসে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। বাংলা একাডেমি, পুলিশ, আনসার এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় পরিস্থিতি সামলানো হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ১৩ ফেব্রুয়ারি স্টলগুলো পুনরায় চালু করা হলে কিছু গোষ্ঠী সরাসরি বাংলা একাডেমিতে অভিযোগ জানায়। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে মব ঘটনার আশঙ্কায় স্টল দুটি বন্ধ করা 'অপরিহার্য' বলে মনে করে কর্তৃপক্ষ। তবে ব্যবসায়িক স্বার্থ বিবেচনায় শিশু শিক্ষা সামগ্রী দিয়ে স্টল প্রতিস্থাপনের সুযোগ রাখা যেতে পারে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম এই চিঠিতে নোট লিখে জানান, “এ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।”
এ বিষয়ে রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমকে অধ্যাপক আজম বলেন, “বইমেলায় খাবার ও পানীয় ছাড়া অন্য কিছু বিক্রি করার অনুমতি নেই। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ইভেন্ট ম্যানেজার এসব দোকান অনুমোদন দিয়েছে। তাই সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “এটি কোনো বিশেষ পণ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।”
তবে চিঠিতে শিশু শিক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে স্টল পুনঃস্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও কেন তা করা হলো-এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, “শিশু কর্নারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা সেখানে পেস্ট-ব্রাশসহ অন্যান্য পণ্য রাখায় সেটিও বাতিল করা হয়েছে।”
তবে সমালোচকরা বলছেন, আগের বছরগুলোতেও বইমেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি হয়েছে, তখন কোনো সমস্যা হয়নি। ফলে এবার বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মদ খালিদ বাংলা একাডেমির কাছে দাবি জানিয়েছেন, “কোন ইসলামিক গ্রুপ হুমকি দিয়ে স্টল বন্ধ করিয়েছে, তা স্পষ্টভাবে জানানো হোক। পুরো ইসলামপন্থিদের ওপর দোষ চাপানোর ষড়যন্ত্র যেন না হয়।”
বইমেলায় এমন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নারীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এর মধ্য দিয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নারীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার স্বাভাবিকীকরণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে বলে সমালোচকদের দাবি।
