বৃষ্টির মধ্যেও টিসিবির পণ্য পেতে দীর্ঘ লাইন, হুড়োহুড়ি
‘সাড়ে এগারটায় লাইনে দাঁড়িয়েছি। মুষলধার বৃষ্টিতে ভিজে তিন ঘণ্টায় লাইন শেষে এসেছি। কিন্তু ট্রাকের কাছে এসে টাকা নেওয়ার পরও কোনো মাল দিচ্ছে না।’ এভাবেই ভেজা কাপড়ে টাউনহলের কাছে থাকা টিসিবির ট্রাক থেকে কোনো পণ্য না পেয়ে ক্ষোভের কথা জানান চাঁদ উদ্যান থেকে আসা হালিমা।
টিসিবির পণ্য কিনতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের লাইনের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া গাড়ি এ সময় রাস্তায় জমে থাকা পানি ছিটকে দিয়ে যায়। সেই পানি শরীর থেকে ঝাড়তে ঝাড়তে হালিমা বলেন, ‘আমগো আগে বললে এমনে বাদুড় ভেজা বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়ায় থাকতাম না। কম দামের আশায় আইসা গুড়েবালি।’
শুধু হালিমা নয়, ইকবালও বলেন, ‘লাইনে আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়েও সব পণ্য পেলাম না। শুধু ডাল ও তেল পেলাম। এ সময় কাজ করলে এর চেয়ে আয় বেশি হতো’।
কেবল এই দু্ই জন নয়, ট্রাক সেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সবার একই অভিযোগ, ‘এত বৃষ্টির মধ্যেও দাঁড়িয়ে থেকেও মাল পাচ্ছি না।’
এ সময় অনেককে ঠেলাঠেলি, হুড়োহুড়ি করতে দেখা যায়। কে, কাকে ঠেলে সামনে যেতে পারে। অনেককে হাতাতাতি করতেও দেখা যায়। অথচ টিসিবি বলছে, ‘আগের মতোই ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে রাজধানীসহ সারা দেশে ৪০০ থেকে ৪৫০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে কম দামে পেঁয়াজ, মসুর ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে।’
টিসিবি সূত্র জানায়, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে এবং করোনাকালীন সাধারণ আয়ের জনগণের সহায়তার জন্য দেশের সব মহানগর, জেলা ও উপজেলায় ৪০০ থেকে ৪৫০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে আগের মতোই গত রবিবার থেকে পেঁয়াজ, মসুর ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল বিক্রি করা হবে। ২৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পর্যন্ত কার্যক্রম চলবে।
এ ব্যাপারে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর মুখপাত্র হুমায়ন কবির এ প্রতিবেদককে জানান, কম আয়ের মানুষের জন্য আবারও গত মাসের মতো কম দামে রবিবার থেকে টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। আগের দরেই পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। তবে শুক্রবার এ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
তিনি জানান, টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকায়, মসুর ডাল ৬০ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১১০ টাকায় এবং পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকায় কিনতে পারবেন। একজন ক্রেতা সর্বনিম্ন দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি মসুর ডাল, দুই কেজি চিনি ও দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারবেন।
রাজধানীর টাউনহলের মেইন রোডে দুপুরে দেখা যায় টিসিবির ট্রাক থেকে সঠিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করছেন টিসিবির ডিলার মেসার্স নুর মোহাম্মদ ট্রেডার্সের নুর মোহাম্মদ। ক্রেতাদের ভোগান্তির ও পণ্য না পাওয়ার হাহাকারের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ সকাল ১১টায় এসেছি। নিয়ম অনুযায়ী এক হাজার ১০০ কেজি পণ্য পেয়েছি। কিন্তু চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে সবাইকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যা আছে তাই দিচ্ছি।’
শুধু মোহাম্মদপুরে নয়, এই দৃশ্য ফার্মগেট, প্রেসক্লাবসহ সব ট্রাকসেলে। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য পাচ্ছে না ক্রেতারা।
উল্লেখ্য, এক মাস বিরতির পর রোববার থেকে ফের এ কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম খুব বেশি। তাই কাকভেজা বৃষ্টিতেও ক্রেতারা লাইনে দাঁড়ায় কম দামে পণ্য পাওয়ার আশায়।
টিসিবির উল্লেখ করা বাজারদরে দেখা যায়, সোমবার রাজধানীর বাজারগুলোয় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫০-১৬০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৭৫-৮০ টাকা, বড় দানার মসুর ডাল প্রতি কেজি ৮৫-৯০ টাকা, মাঝারি মানের মসুর ডাল ৯৫-১০০ টাকা, ছোট দানার সবচেয়ে ভালো মানের মসুর ডাল ১২০-১৩০ টাকা এবং পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকা কেজি।
জেডএ/এএন