ধানমন্ডিতে ছিনতাই হওয়া ফোন উদ্ধার হলো ভারতের গুজরাট থেকে
ডেপুটি জেলার ফেরদৌস মিয়া এবং উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর ধানমন্ডির একটি রাস্তা থেকে গত বছরের ৭ নভেম্বর ছিন দিনাজপুরের ডেপুটি জেলার ফেরদৌস মিয়ার মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়। অবশেষে তার ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে দেশের অভ্যন্তরে নয়, তার ফোন উদ্ধার করা হয়েছে ভারতের গুজরাট রাজ্য থেকে!
ফোন ছিনতাইয়ের পর ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর রাতেই ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। একইসঙ্গে, তখনই ‘স্মার্ট থিংস’ নামের স্যামসাংয়ের তৈরি একটি অ্যাপের মাধ্যমে জানতে পারেন ফোনটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
ডেপুটি জেলার ফেরদৌস মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, সেদিন ধানমন্ডি ৮ নং রোডে একটি বটগাছের নিচে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ করে দুজন লোক একটি মোটরসাইকেল এসে তার সামনে দাঁড়ায়। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয় ওরা। ফোনটা ছিল স্যামসাংয়ের এস২৩ আলট্রা। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, কেউ প্রাঙ্ক করছে কি-না, কিন্তু মিনিটখানেকের মধ্যেই ভুল ভাঙল তার, বুঝলেন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন তিনি।
জিডি করার সময় পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে জানান, ছিনতাইকৃত ফোনটি কেউ ব্যবহার করা শুরু করলেই কেবল সেটা উদ্ধার করা যাবে। ওই অ্যাপের দিকে সার্বক্ষণিক নজর রেখেছিলেন ফেরদৌস। কিছুদিন পরে একদিন সকালে ওই অ্যাপে তার ছিনতাই হওয়া ফোনের লোকেশন দেখায়।
‘শুরুতে উৎসাহিত হয়ে উঠলেও পরক্ষণেই তাতে ভাটা পড়ে ফোনের লাইভ লোকেশন দেখার পর। লোকেশন দেখাচ্ছিল, ঢাকা থেকে ২ হাজার ৫৪৮ কিলোমিটার দূরের ভারতের গুজরাট রাজ্যের আমরেলি শহর। ফলে ফোনটা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা যে একদমই নেই তা বুঝতে পারছিলাম।’ বলেন তিনি।
সে রাতের এসব ঘটনা ও ভারত থেকে ফোন উদ্ধারের বিষয়টি ফেরদৌস মিয়া গণমাধ্যমের কাছে বিস্তারিত বর্ণনা করেন। ফেরদৌস জানায় পুলিশ তাকে জানিয়েছে, তাদের অভিযানে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকায় চুরি হওয়া বেশিরভাগ দামি স্মার্টফোন প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাচার করা হয়। এরা হচ্ছে আন্তর্জাতিক পাচার চক্র। সম্প্রতি রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় এক অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযানে দুই দেশে সক্রিয় এ চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারও করা হয়।
তবে নিজের ফোন ফিরে পেতে নাছোড়বান্দা ছিলেন ফেরদৌস মিয়া, ফলে উপায়ও খুঁজতে থাকেন। ইন্টারনেটে নানান পরামর্শ জেনে, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে এবং নানান ওয়েবসাইট ঘুরে শেষ পর্যন্ত একটাই সমাধানের পথ পান, সেই অনুযায়ী ভারতের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ এবং দুই দেশের হাইকমিশনে ই-মেইল করতে থাকেন।
ফেরদৌস বলেন, ই-মেইল করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। আমি বাংলাদেশ ও ভারতের হাইকমিশন, গুজরাটের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক রাজ্যসচিব, গুজরাটের রাজ্য পুলিশের নোডাল অফিসার, গুজরাট পুলিশ কমিশনারের দপ্তরকে হারানো ফোনটির সমস্ত কাগজপত্রের তথ্য দিয়ে ই-মেইল করি। দেই ফোনের লাইভ লোকেশন, আইএমইআই নম্বর, ফোন কেনার রশিদসহ যাবতীয় তথ্য। মেইল পাঠানোর কয়েকদিন পর থেকে নিয়মিত মেইলবক্স চেক করতে থাকি। কিন্তু, কয়েক সপ্তাহ পরেও যখন কোনো ই-মেইল পেলাম না, তখন ফোনটি ফেরত পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিলাম।
তিনি বলেন, তবে চলতি বছরের ১ মার্চ বিদেশি একটি নম্বর থেকে আমাকে কল করা হয়। প্রথমে ভেবেছিলাম, কোনো জালিয়াত চক্রের কল। কিন্তু, অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটি নিজেকে গুজরাটের একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিলেন। ফোনটি কুরিয়ারে পাঠাতে আমার ঠিকানা চাওয়ার আগপর্যন্ত আমি তার কথা বিশ্বাসই করিনি।
ফেরদৌস বলেন, তবে কিছুদিনের মধ্যে সত্যিই আমি ফোনটি ফিরে পেলাম। তাই এমনটা ঘটলে সাধারণ মানুষকে হাল না ছাড়ারই পরামর্শ দেব। আপনার খোয়া যাওয়া ফোন কোনো আন্তর্জাতিক চক্রের হাতে পড়লে সম্ভাব্য সমস্ত সূত্র থেকে তথ্য নিন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান। নিরাশ হবেন না, আমার কথাই বলি, সীমান্তের ওপারের প্রায় আড়াই হাজার কি.মি. দূরে এক মফস্বল শহর থেকে ফোনটা ফেরত পাব – এটা তো অকল্পনীয়।