এবার নিজের রেস্টুরেন্ট বন্ধ করলেন স্থপতি মুস্তাফা খালিদ
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর বেইলি রোডে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় শোকাহত পুরো দেশ। সকল মহলের আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই ইস্যু। এদিকে এমন অগ্নিকাণ্ডের পর প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অনুমোদনহীন রেস্টুরেন্টগুলোতে চলছে অভিযান। অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা দেখলেই করা হচ্ছে জরিমানা। এমনি বন্ধ-সিলগালা ও করা হচ্ছে।
বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে একটি নাম সবার সামনে চলে আসে। সব থেকে বেশি আলোচনায় আসা ব্যক্তিটি হচ্ছেন গ্রিন কোজি কটেজের আর্কিটেক্ট মুস্তাফা খালিদ পলাশ। এছাড়া নিজের নকশা করা ধানমন্ডির গাউসিয়া টুইন পিক ভবন নিয়ে ফেসবুক পোস্টে তার বিস্ফোরক মন্তব্য ঝড় তোলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। স্পষ্ট ভাবেই বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের বিরোধিতা করেছিলেন তিনি।
তবে গণমাধ্যমে অন্যের রেস্টুরেন্টের বিরোধিতা করলেও নিজেও বনানীতে টেগোর টেরাস নামের একটি রুফটপ রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করতেন এই স্থপতি। যার দেখভাল করতেন তার ভাই আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মুস্তাফা। শুধু বনানীতে নয়। ধানমন্ডিতেও একটি রেস্টুরেন্ট চালান এমন আলোচনা আছে মুস্তাফা খালিদকে নিয়ে।
অভিযোগ ও সূত্রের দেওয়া তথ্য নিয়ে টেগোর টেরাস রেস্টুরেন্টের খোঁজ নিয়ে বনানীতে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তবে ধানমন্ডির রেস্টুরেন্টের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
বনানীর ১২ নম্বর রোডের ৪৪ নম্বর ১১ তলা ভবনের রুফটপে মূলত টেগোর টেরাস নামের রেস্টুরেন্টটি চালাতেন আলোচিত এই স্থপতি। তবে আলোচনায় আসার পর সেখান থেকে রেস্টুরেন্টের অস্তিত্ব বিলিন করার চেষ্টা করছিলেন কর্তৃপক্ষ।
দেশের একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বনানীর ৪৪ নম্বর ভবনে খদ্দের সেজে রেস্টুরেন্টের গেলে ভবনটির গ্রাউন্ড ফ্লোরে চোখে পড়ে তাড়াহুড়ো করে টেগোর টেরাসের আসবাবপত্রসহ সকল সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়ার দৃশ্য। একটি ট্রাকে করে টেগোর টেরাসের ব্যবহৃত মাইক্রোওভেন ও রান্নার সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হলো আমাদের না জানা গন্তব্যে।
লিফট ব্যবহার করে নামানো হচ্ছে বাকি সরঞ্জামও। এ সময় টেগোর টেরাসে যেতে চাইলে উপস্থিত লোকজন জানান সেটি বন্ধ আছে। তারা জানান, যাওয়া যাবে না উপরে। তাদের কেউ বলেন, উপরে কোন রেস্টুরেন্টেই নেই।
জানা গেছে রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই সেখানে ২০১৮ সাল থেকেই রেস্টুরেন্ট চালাতেন স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ। ওই বছরের ৪ নভেম্বর রেস্টুরেন্টটির উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সে সময় বেশ জোরালো ভাবেই গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছিল টেগোর টেরাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সংবাদ।
তবে বেইলি রোড ট্র্যাজেডির পর বিভিন্ন ভবনের রেস্টুরেন্ট নিয়ে মন্তব্য করে আলোচনার তীর নিজের দিকে যেতেই রাজউকের অনুমোদনহীন রেস্টুরেন্টটির তথ্য গোপন করতে গতকাল রাত থেকে রেস্টুরেন্টটির কার্যক্রম বন্ধ করেন স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ। ৫ মার্চ শুরু হয় ১২ নম্বর রোডের ৪৪ নম্বর ভবনের বাইরের ফ্লোর নির্দেশিকা থেকে রেস্টুরেন্টটির নামও মুছে ফেলা ও আসবাব সরানোর কাজ। ইতিমধ্যে ফাঁকা করা হয়েছে রেস্টুরেন্টের ভিতর। সরিয়ে ফেলা হয়েছে আসবাবপত্র ও রান্নার সরঞ্জাম।
এ বিষয়ে স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশের সঙ্গে কথা বলতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে কথা হয় রেস্টুরেন্টটির দায়িত্বে থাকা তার ভাই শিমুল মুস্তাফার সঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরে বনানীর নন-কমার্শিয়াল এলাকায় রেস্টুরেন্ট চালাতেন স্বীকার করে তিনি বলেন, কোর্টের স্টে অর্ডার নিয়েই আমরা রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছিলাম। অনুমোদন না থাকলে কি এত বছর রেস্টুরেন্ট চালাতে পারতাম?
অনুমোদন থাকলে কেন বন্ধ করা হচ্ছে জানতে চাইলে শিমুল মুস্তাফা জানান, সবাইকে সচেতন করতেই আমরা বন্ধ করছি। নন-কমার্শিয়াল এলাকায় রেস্টুরেন্ট চালানো ঠিক না। তাই সচেতনতা বাড়াতেই উদ্যোগ। অন্য কোন কারণ নেই।
এ বিষয়ে গাউসিয়া টুইন পিক ভবন মালিক সমিতির সদস্য আহসান আনোয়ার বলেন, মুস্তাফা খালিদ পলাশ নিজেই অনুমোদনহীন রেস্টুরেন্ট চালাতেন। তিনি নিজেই অপরাধী হয়ে একটি পোস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুরো রেস্টুরেন্ট খাতকে ধ্বংস করে দিলেন। সামনে ঈদ, আমাদের ইমপ্লোয়ি যারা আছেন তারা আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে। আমাদের এত টাকা লোন। কীভাবে কী করব জানি না। তবে আমরা তদন্তের জন্য জোর দাবি জানাই। তিনি যদি কোন অন্যায় করে থাকেন তাহলে শাস্তির দাবি জানাই।