জলাতঙ্ক আতঙ্কে রাজধানীবাসী, এক বছরে হাসপাতালে ৯৪ হাজার
ফাইল ছবি
রাজধানীর অলিগলিতে বেড়েই চলছে বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত। অনেক এলাকায়, বিশেষ করে রাতের বেলায় গলির ভেতরে বেওয়ারিশ কুকুরের আচমকা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্ধ্যাত্বকরণ ও টিকা কার্যক্রম ধীর গতিতে পরিচালনা করায় তাদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছেই।
ঢাকার মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তথ্য বলছে, কুকুর, বিড়াল, বেজি, বানর ও খ্যাঁকশিয়ালের আক্রমণের শিকার হয়ে গত বছর এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৪ হাজার ৩৮০ ব্যক্তি। এর আগের বছর, ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮৯ হাজার ৯২৮ জন। তাঁদের মধ্যে দুই–তৃতীয়াংশই কুকুরের আক্রমণের শিকার। এর পরে আছেন বিড়ালের আক্রমণে শিকার। বেজি, বানর ও খ্যাঁকশিয়ালের আক্রমণের শিকার তুলনামূলক অনেক কম।
ঢাকার এই হাসপাতালে মূলত রাজধানী ও আশপাশের জেলার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। এখানে চলতি বছরের জানুয়ারিতে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ১১ হাজার ৬৭২ জন।
মিরপুরের বাসিন্দা সৈকত আহমেদ বলেন, তাঁর বাসার গলিতে অনেক বেওয়ারিশ কুকুর আছে। সেগুলো দিনদুপুরে পথচারীদের তাড়া করে। কখনো কখনো কামড়ও বসিয়ে দেয়। এ অবস্থায় বাচ্চা নিয়ে বাইরে বের হতে তিনি ভয় পান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ২০১২ সালে উচ্চ আদালতে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কুকুর নিধনকে অমানবিক উল্লেখ করে তা বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একদিকে বেওয়ারিশ কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলো যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় রাজধানীতে এই প্রাণীর উপদ্রব বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে কুকুরের আক্রমণের শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কুকুরের কামড়ের কারণে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছর মারা গেছেন ৪২ জন। এর আগের বছর, ২০২২ সালে মারা গেছেন ৪৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ডেপুটি ম্যানেজার চিকিৎসক এস এম গোলাম কায়সার প্রথম আলোকে বলেন, ২০১০ সালের আগে দেশে প্রতিবছর জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে আড়াই হাজার মানুষ মারা যেত। জলাতঙ্ক রোগ নির্মূলে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করায় এখন মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশ থেকে স্থায়ীভাবে জলাতঙ্ক রোগ নির্মূলের লক্ষ্যে ২০১১ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচির আওতায় চারটি কর্মকৌশল নির্ধারণ করে। এগুলো হলো জলাতঙ্ক রোগ এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম জোরদার। কুকুরের কামড়ের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। ব্যাপক হারে কুকুরের শরীরে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকাদান এবং লাইগেশন ও খোজাকরণের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। তবে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হলেও কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কাজটি শুরু হয়নি।
মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালসহ অন্য প্রাণীর আক্রমণের শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এটা কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালকে টিকার আওতায় আনতে হবে। পোষা প্রাণীকেও টিকা দিতে হবে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে হবে। কোনো ব্যক্তি আক্রমণের শিকার হলে সরকারি হাসপাতাল থেকে টিকা নিতে হবে। গুরুতর আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। ঝাড়ফুঁকসহ কবিরাজি চিকিৎসা নেওয়া যাবে না।