পূর্ণতা পেলো মেট্রোরেল, তৈরী হলো উত্তর-দক্ষিণের নতুন গতিপথ
ফাইল ছবি
নানা অপেক্ষা-প্রতিক্ষার অবসান শেষে অবশেষে পূর্ণতা পেলো দেশের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬। গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। আর এর মধ্য দিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে তৈরি হলো এক নতুন গতির পথ। এখন ৩৮ মিনিটেই মেট্রোরেলে করে উত্তরা থেকে সরাসরি যাওয়া যাবে মতিঝিল। এতে সুবিধা পাবেন এই রুটে চলাচল করা যাত্রীরা। তাদের যাপিতজীবনে যুক্ত হবে অতিরিক্ত সময়। তাই উচ্ছ্বসিত মেট্রোরেলের আশপাশ এলাকার নানা পেশাজীবী ও সাধারণ বাসিন্দারা। তারা বলছেন, ‘দীর্ঘ সময় নাকাল হয়ে অফিস যাওয়ার কষ্ট থেকে অবশেষে মিলছে মুক্তি।’
রবিবার (৫ নভেম্বর) প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে মতিঝিল গেছে মেট্রোরেল। এদিন সকাল সাড়ে ৭টায় উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা মেট্রোরেলটি মতিঝিলে এসে পৌঁছায় ৮টা ১ মিনিটে।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল অব্যাহত থাকবে। তবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের ৯টি স্টেশনের সব কটিতেই এখন যাত্রী ওঠানামা করছে। তবে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে এখন তিনটি স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই অংশে শুরুতে ফার্মগেট, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল—এই তিন স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে। বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি—এই চার স্টেশন আগামী তিন মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে টিএসসি স্টেশন আগে চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর কারওয়ান বাজার স্টেশন চালু হতে পারে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সূত্র বলছে, উত্তরা থেকে মতিঝিলের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এখন গড়ে ১৭ মিনিট সময় লাগছে। সবগুলো স্টেশন চালু হলে ওঠানামাসহ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে ৩৮ মিনিট সময় লাগবে।
এদিন সকাল ৯টায় মেট্রোরেলের কয়েকটি স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, অফিসগামী যাত্রীদের পাশাপাশি অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড়। আবার বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের কারণেও কেউ কেউ মেট্রোরেলে যাতায়াত করছেন।
মিরপুরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. জাকির অফিস করতে নিয়মিত মতিঝিল যান। উচ্ছ্বসিত এই তরুণ বলেন, ‘এখন থেকে আর অফিসে যেতে দেরি হবে না। অফিসে কোনও এক্সকিউজও দিতে হবে না। সময় মতোই হাজির হতে পারবো।’
আরেক চাকরিজীবী আশিক বলেন, ‘আমার অফিসের গাড়ি আছে। কিন্তু অবরোধের কারণে গাড়ি আসেনি। অবরোধ থাকার পরও আমি নিশ্চিন্তে এবং সময়মতোই যেতে পারছি। আবার বাসের মতো আগুন দেওয়ারও চিন্তা নেই। এটা অবশ্যই অনেক বড় সুবিধা বলে আমি মনে করি।’
সাধারণ গণপরিবহনে উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে অফিস আওয়ারে প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। তবে মেট্রোরেলে করে প্রায় ৩৮ মিনিটের মধ্যে নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারছে ঢাকার এক প্রান্তর থেকে আরেক প্রান্ত। এতে সময় অপচয় রোধের পাশাপাশি পেশাগত ও ব্যক্তিজীবনে যুক্ত হচ্ছে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা। যা জীবনকে আরও ‘প্রোডাক্টিভ’ করে তুলবে বলে মনে করেন যাত্রীরা।
নাজমুল হোসেন নামে মিরপুরের এক যাত্রী বলেন, ‘মেট্রোরেলের কারণে যে সময়টা সেভ হবে। তাতে আগে যদি আমি একটি কাজ করতে পারতাম এখন আমি দুটি কাজ করতে পারবো। আর সড়কে ভোগান্তির কারণে কাজের ক্ষেত্রে মেন্টালি অ্যাডজাস্ট করতে সমস্যা হতো, সেটা আর হবে না। এখন কাজেও মনযোগ বাড়বে।’
এখন অফিস শেষ করে পরিবারকে ‘কোয়ালিটি টাইম’ দেওয়াও সম্ভব হবে বলে মনে করেন উত্তরা আজিমপুর থেকে আসা আমিনুর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যানজটের কারণে রাস্তায় তিন-চার ঘণ্টা নষ্ট হয়। আর এমনিতে তো অফিস ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা থাকতে হয়। দিনে অর্ধেকেরও বেশি সময় পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়। তাছাড়া আসা যাওয়া যে ভোগান্তি পরে বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো সময় কাটানোর সুযোগ বা এনার্জি কোনটাই থাকে না। আগারগাঁও পর্যন্ত এর আগে যাতায়াত করেছি। আজ মেট্রোরেলে করে পল্টনে আমার অফিসে যাবো। এখন থেকে কোনও ভোগান্তি ছাড়াই যখন আসা-যাওয়া হবে। অনেক সময় সেভ হবে। ফলে ফ্যামিলির সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটাতে পারবো।’
উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। মেট্রোরেলে ভ্রমণের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। আর উত্তরা থেকে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। উত্তরা থেকে বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভাড়া ৯০ টাকা। উত্তরা থেকে ফার্মগেটের ভাড়া ৭০ টাকা। অন্যদিকে আগে চালু হওয়া উত্তরা নর্থ স্টেশন (দিয়াবাড়ি) থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া ৬০ টাকা। মাঝের সাতটি স্টেশনের জন্য আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করা আছে।