সেই জজ মিয়া এখন কেমন আছে,কোথায় আছে
জজ মিয়া।ছবি সংগৃহিত
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমল; ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে তাঁর সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। এই হামলায় ২২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আড়াইশর বেশি লোক, যারা এখনো গ্রেনেড হামলার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে এই গ্রেনেড হামলার কথা উঠলেই হতাহত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি আরেকটি নাম ঘুরে ফিরে আসে।তিনি জজ মিয়া।
বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলের ওই হামলায় জড়িতদের রক্ষায় নানা অপতৎপরতার অভিযোগ ছিল এ মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডির বিরুদ্ধে। এরই একজন জজ মিয়া। তাকে নিয়ে সাজানো হয় অসম্ভব একটি গল্প। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে এ কাজে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ওঠে। গ্রেনেড হামলার ঘটনাস্থল বা পরিকল্পনার সঙ্গে না থেকেও ক্ষতির শিকার হন জজ মিয়া।
গ্রেনেড হামলার প্রকৃত অপরাধীদের রক্ষা করতে ২০০৫ সালের ১০ জুন নোয়াখালীর সেনবাগের বাড়ি থেকে জজ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের কারণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে থাকা জজ মিয়াকে প্রথমে সেনবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাকে ঢাকায় এনে নির্যাতন চালায়।
১৭ দিন রিমান্ডের পর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হামলার জন্য দায়ী করে রাজধানীর ১১ সন্ত্রাসীর নাম উল্লেখ করেন জজ মিয়া। এরা হলো- রবিন, শফিক, বকুল, হাশেম, লিংকন, আনু, মুকুল, সুব্রত বাইন, জাহিদ, জয় ও মোল্লা মাসুদ। জজ মিয়া বলেন, হামলায় নেতৃত্ব দেয় বাড্ডার সন্ত্রাসী মুকুল। তবে এ জবানবন্দির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল। জজ মিয়া এও বলেছিলেন, গ্রেনেড ও বোমার পার্থক্যও তিনি জানেন না।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় যখন জজ মিয়াকে ফাঁসানো হয় তখন তার বয়স ছিল ২৫ বছর। নোয়াখালীর সেনবাগে ভিটেমাটি থাকলেও গুলিস্তান সিনেমা হলের সামনে পোস্টার ও ক্যাসেট বিক্রি করে কোনোমতে জীবিকা চলত। তাকে মুক্ত করতে ছয় বছরের আইনি লড়াইয়ে সেই ভিটেমাটিও বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছিল জজ মিয়ার পরিবার। তাকে মুক্ত করতে তার ভাই, বোন সবাই নিঃস্ব হয়ে গেছে।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বোকারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট গ্রামের মৃত আবদুর রশিদের ছেলে জজ মিয়া। জন্ম ঢাকার তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়ায়। বাবার ভাঙ্গারি ব্যবসার সুবাদে পরিবারের সঙ্গে প্রথমে তিব্বত বস্তি পরে নাখালপাড়া নূরানী মসজিদের পাশে থাকতেন। বাবার মৃত্যুর পর পঞ্চম শ্রেণি পাস জজ মিয়ার পড়াশোনা আর হয়নি। কিছুদিন বড় ভাই আলমগীরসহ বাবার ভাঙারি ব্যবসা দেখাশোনা শুরু করেন। পরে রাজধানীর গুলিস্তানে হকারের কাজ করতেন।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে ২১ আগস্ট মামলার নতুন তদন্তের উদ্যোগ নেয়। ২০০৮ সালের ১১ জুন নতুন অভিযোগ পত্রে হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২০০৯ সালের ২২ জুন বাড়তি তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সে বছরই ৩ আগস্ট সিআইডির নতুন কর্মকর্তাদের যুক্ত করে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় জজ মিয়াকে, মুক্তি পান তিনি।
জজ মিয়া এখন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। সামান্য আয়ে স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে কোনোরকমে তাঁর সংসার চলে। গ্রামে থাকা মায়ের খরচও দিতে হয় তাঁকে।