শাহজালাল বিমানবন্দরে হচ্ছে ১২০০ কোটি টাকার আন্ডারপাস
আসকোনা হাজী ক্যাম্প থেকে হাজীদের সহজে বিমানে উঠতে ও পথচারীদের নিরাপদে বিমানবন্দর পারাপারে আন্ডারপাস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পরই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ‘হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বিমানবন্দর রেল স্টেশন সংলগ্ন হাজীক্যাম্প পর্যন্ত সমন্বিত পথচারী আন্ডাপাস নির্মাণ’ প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এই আন্ডারপাস করতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। ১০৭০ মিটার দীর্ঘ এই আন্ডাপাশ নির্মাণ করা হবে দুই বছরে।
প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে পরিকল্পনা কমিশনে সম্প্রতি পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিছু ব্যাপারে আপত্তি থাকায় তা সংশোধন করতে বলা হয়েছে। সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়ে খুব তাড়াতাড়ি অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিমানবন্দরে অত্যাধুনিক এই আন্ডাপাস করা হবে। এর ভেতরে লিফট, এসি, বগিকার, ওয়াকওয়েসহ যা যা দরকার সবই থাকবে। যাতে হাজী ক্যাম্প থেকে বিমানবন্দরে হাজী ও পথচারীরা নিরাপদে ও সহজে যাতায়াত করতে পারেন।
দুই বছরে কী এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সেনাবাহিনী। তারা বলেছে, ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে। সেটার আলোকে প্রকল্প ডিজাইন করা হয়েছে। কাজেই একটু কষ্ট হলেও সে সময়ে তারা বাস্তবায়ন করবে। তারা গণভবনে ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীকেও এই প্রকল্পটি দেখিয়েছে। সেটা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্দেশনা দিয়েছেন। তা আমলে নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কটি রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে ৩২টি জেলাকে সংযুক্ত করেছে। একই হজ্বক্যাম্প-আসকোনা-বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন-এমআরটি স্টেশন-বিআরটি স্টেশন-বিমানবন্দর টার্মিনাল-১,২ ও ৩ এবং ঢাকা আশুলিয় এলিভেটেড এক্সপ্রেস গড়ে উঠছে। পাশে র্যাবের হেড কোয়াটার অফিসও রয়েছে। মাত্র একটি ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পথচারীরা বিমানবন্দর থেকে বিমানবন্দর স্টেশন ও হজ্বক্যাম্পে যাতায়াত করেন। যা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। অনেকে ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। এরফলে প্রায় দুর্ঘটনাও ঘটছে। মালামাল পার করতেও দুর্যোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদেরও ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
তাই সাধারণ পথচারীদের নিরাপদে সড়ক পারাপার এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচল ও যাত্রীদের পারাপারে সমন্বিত পথচারী আন্ডাপাস করার স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এই আন্ডারপাসও দৃষ্টিনন্দন করা হবে। সড়ক, রেল ও বিমানের যাত্রী এবং সাধারণ পথচারীদের জন্য এটি একটি মাল্টিমোডাল হাব হবে। তাতে খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন করা হবে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনে অর্থাৎ দুই বছরে তা করা হবে।
সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বিমানবন্দর রেল স্টেশন পর্যন্ত এই পথচারী আন্ডাপাস নির্মাণের নির্দেশ দেন। এরপর ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারিতেও প্রধানমন্ত্রীকে দেখানো হয়েছে।
প্রথমে এটি ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের (বিআরটি গাজিপুর) অংশে ধরা হয়েছিল। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে অ্যালাইনমেন্ট নির্ধারণ করে সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ অন্যান্যদের রেট সিডিউল অনুযায়ী প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ১৮৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আন্ডাপাসের দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে ১০৭০ মিটার। ট্যানেলের উচ্চতা হবে ৭ দশমিক ৬ মিটার ও চওড়া হবে ৯ মিটার। এতে যাত্রী ছাউনি থাকবে আটটি। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পরপরই সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর হবে।
এর অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে গত ১৮ মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কিছু ব্যাপারে ত্রুটি ধরা পড়লে তা সংশোধন করতে বলা হয়েছে। সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনা করা হবে বলে সূত্র জানায়।
জেডএ/আরএ/