বাস কিনতে বিআরটিসি’র ৭ কোটি টাকার প্রশিক্ষণ প্রস্তাব, আপত্তি পরিকল্পনা কমিশনের
করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের থাবায় এখনো ধুঁকছে দেশের অর্থনীতি। এই অবস্থায়ও প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশে প্রশিক্ষণ চায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৩৪০টি এসি বাস কেনার জন্য সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি এমন প্রশিক্ষণ চায়।
সম্প্রতি বিআরটিসি ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশে প্রশিক্ষণ নেওয়ার এমন প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশনে। যদিও পরিকল্পনা কমিশন এতে আপত্তি দিয়েছে। বিআরটিসির জন্য সিএনজি একতলা এসি বাস সংগ্রহ প্রকল্পের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় পরিকল্পনা কমিশন থেকে এমন আপত্তি দিয়ে সংশোধন করতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তাই সরকার কৃচ্ছ্রতা সাধনে বিদেশ ভ্রমণ ও প্রশিক্ষণে একেবারে সিলগালা করার মতো নির্দেশনা দিয়েছে। তারপরও বিআরটিসি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৩৪০টি সিএনজি এসি বাস কেনার জন্য বৈদেশিক প্রশিক্ষণে প্রায় সাত কোটি টাকা খরচ করার প্রস্তাব করেছে। এটা আসলে গ্রহণযোগ্য নয়।
শুধু তাই নয়, পরামর্শক সেবার নামেও প্রায় সাত কোটি টাকা খরচ করার প্রস্তাব করেছে বিআরটিসি। এতে প্রতিটি বাসের মূল্য কত হবে সে ব্যাপারেও প্রশ্ন উঠেছে।
জানতে চাইলে বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কোরিয়ার ঋণে ৩৪০টি এসি বাস কেনা হবে। সবধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে বাসগুলোতে। যেহেতু কোরিয়া থেকে এসব বাস কেনা হবে। কীভাবে ব্যবহার হবে তা জানতেই বৈদেশিক প্রশিক্ষণের দরকার। এ জন্যই এখাতে ৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা খরচ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বললেও দক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারেও গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই আমাদের লোকবলকে দক্ষ করে গড়ে তুলতেই এই খরচ ধরা হয়েছে।
বিআরটিসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, পরামর্শক সেবা খাতেও ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন পরামর্শকের কর্মপরিধি কী হবে তা জানতে চেয়েছে। আমরা সেভাবে সংশোধন করে যৌক্তিকভাবে খরচ রাখব। বাসের রেট সিডিউল না থাকলেও আমরা উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করব। যাতে কোরিয়ার যত কোম্পানি আছে সবাই অংশ নিতে পারে। সেখান থেকে সর্বোনিম্ন দরদাতার কাছ থেকে এসব সিএনজি এসি বাস কেনা হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা শহরের পরিবহন ব্যবস্থাকে সাজানোর জন্য সিটি বাস সার্ভিস নামে নগর পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এরই অংশ বিশেষ করে কাঁচপুর-ঘাটারচর রুটে বিআরটিসির কিছু নন-এসি বাস চলাচল করছে। কিন্তু এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। আবার প্রচণ্ড গরমে নন-এসি বাসগুলো কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পাচ্ছে না।
অন্যদিকে, এসি বাসের স্বল্পতার কারণে এসি প্রাইভেট কারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য ঢাকা শহরে যানজট ও বায়ুদূষণ বাড়ছে। তাই প্রচণ্ড গরমে আরামদায়ক ভ্রমণ ও প্রাইভেট কারের ব্যবহার কমাতে বিআরটিসির বহরে পর্যাপ্ত সংখ্যক মানসম্পন্ন এসি বাস যোগ করা হবে।
এ ছাড়া, রাজধানীতে মেট্রোরেলও চালু হয়েছে। আবার বাস র্যাপিড ট্রানইজট (বিআরটি) খুব তাড়াতাড়ি চালু হবে। তাই এমআরটি ও বিআরটি কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করার জন্য বিআরটিসির জন্য সিএনজি একতলা এসি বাস সংগ্রহ প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। তাতে খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৬ কোটি টাকা।
এই টাকার মধ্যে কোরিয়ার ইডিসিএফ ঋণ ৭৭৬ কোটি টাকা। বাকি ৩০০ কোটি টাকা সরকারের কোষাগার থেকে খরচ করা হবে। তাতে ৩৪০টি এসি বাস কেনা হবে। এর মধ্যে রাজধানীর জন্য ৩০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪০টি সিএনজি সিঙ্গেল ডেকার এসি সিটি বাস কেনা হবে।
এ ছাড়া, বিভিন্ন জেলার জন্য ২০০টি সিএনজি সিঙ্গেল ডেকার এসি ইন্টারসিটি বাস সংগ্রহ করা হবে। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪৫ কোটি টাকা। দুই ক্যাটাগরির জন্য ১৫ শতাংশ করে খুচরা যন্ত্রাংশ কেনা হবে। তাতে খরচ ধরা হয়েছে ১২৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া, অন্যান্য খরচও রয়েছে।
প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনে অর্থাৎ দুই বছরে বাস্তবায়ন করা হবে। এর প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে তা যাচাই করতে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পিইসি সভা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সভায় ঋণের শর্তাবলী, বিআরটিসি বহরে কতগুলো বাস সচল ও কতগুলো অচল তা জানতে চাওয়া হয়েছে। বাসের নির্দিষ্টি রেট সিডিউল না থাকায় যে ক্রয়মুল্য ধরা হয়েছে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া, বৈদেশিক প্রশিক্ষণে প্রায় সাত কোটি টাকা ও পরামর্শক খাতে ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা খরচ করার প্রস্তাবের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন খাতে আপত্তি থাকায় তা সংশোধন করতে বলা হয়েছে।
সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে সব প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত অনুমোদনের খুব তাড়াতাড়ি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
আরইউ/এমএমএ/