রাজধানী ঢাকা এখন ফাঁকা
প্রতি বছর ঢাকাবাসীর বড় একটা অংশ ঈদে গ্রামের বাড়িতে যায়। এবারও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিপুল সংখ্যক মানুষ পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে ঢাকা ছেড়েছে। সেই কারণে রাজধানী ঢাকা এখন ফাঁকা হয়ে গেছে। এই সুযোগে ঢাকাই অবস্থানকারীদের অনেকে আবার ফাঁকা ঢাকা দেখার জন্য বাইরে বের হচ্ছেন। কেউবা হেঁটে কেউবা গাড়িতে করে দেখছেন ঢাকা।
শুক্রবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের রাস্তাঘাট ফাঁকা দেখা গেছে।
এই নগরীতে সবসময় দুঃসহ যানজট লেগেই থাকে। আজ সেই যানজট একেবারেই নেই। ঢাকা থেকে বেরোনোর পথে কিছু কিছু এলাকায় ঈদে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের সামান্য যানজট থাকলেও পুরা ঢাকা এখন ফাঁকা।
শাহবাগে কথা হয় মহাখালীর যাত্রী রবিন হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মহাখালী থেকে শাহবাগ এসেছি মাত্র ১৫ মিনিটে। আগে যানজটের কারণে সময় লাগতো এক থেকে দেড় ঘণ্টা।
মিরপুর থেকে নিউমার্কেট এলাকায় এসেছেন আনিসুর রহমান। আনিসুর রহমান বলেন, আজ খুব তাড়াতাড়ি মিরপুর থেকে নিউমার্কেট এলাকায় আসতে পেরেছি। রাজধানী এখন অনেকটা ফাঁকা আগের মত যানজট নাই। তবে গাবতলী রোডে হালকা কিছু যানজট আছে তবে সেগুলো বেশি সময় ধরে থাকছে না।
এদিকে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে এখন আর ব্যস্ততা নেই। শাহবাগ, পল্টন, সচিবালয়, কাকরাইল, মৎস্যভবন, হাইকোর্ট, প্রেসক্লাব, শাহবাগ কাওরানবাজার, মগবাজার, মালিবাগ, এলাকার রাস্তাগুলো এখন ফাঁকা। মাঝে মধ্যে কয়েকটি ব্যক্তিগত ও গণপরিবহন দেখা গেলেও যানজটের তেমন কোনো চিহ্ন নেই বললেই চলে।
তবে যানজট না থাকলেও গণ-পরিবহনের সংখ্যা রাস্তায় অনেকটা কমে গেছে। সিএনজি ও রিকশা চালকেরা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া চাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে যারা বাড়ি যাচ্ছেন, তারা এসব যানবাহনে করে লঞ্চ ও বাস টার্মিনালে এবং রেলওয়ে স্টেশনে যাচ্ছেন।
সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ‘বিকাশ পরিবহনের’ হেলপার আলম বলেন, যাত্রী নেই তাই রাস্তা-ঘাট সব ফাঁকা। আব্দুল্লাহপুর থেকে মাত্র ৫০ মিনিটে নিউমার্কেটে এসেছি। অন্য সময়ে ৩-৪ ঘণ্টা লেগে যেতো।
রাজধানীর মিরপুর থেকে ৩৫ মিনিটে পল্টনে আসা যাত্রী আমিনুল ইসলাম বলেন, ছুটি দেরিতে পাওয়ায় আজ বাড়ি যাচ্ছি। পল্টন থেকে বাসে উঠব। মাত্র ৩৫ মিনিটে বাসে পল্টন এসেছি। ঈদ ছাড়া ফাঁকা রাস্তা দেখা যায় না। দেরিতে যাওয়ার এটাও একটি কারণ।
সিএনজিচালক মঈন উদ্দিন বলেন, আজ ভোর থেকে ৫টা বড় ট্রিপ পেয়েছি। রাস্তাঘাটে গণপরিবহন কম থাকায় বেশি ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে। রাস্তা ফাঁকা থাকায় খুব সহজেই মিলছে এবার এসব ভাড়া। তাছাড়া আমিও চান রাত্রে বাড়িতে চলে যাব।
রাস্তা ফাঁকা ও গণপরিবহন কম থাকার পাশাপাশি যানজট না থাকায় রিকশা ও সিএনজিচালকদের আয় ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। রিকশা ও সিএনজি চালকরা বাড়তি ভাড়া দাবি করছেন বলে অভিযোগও করেছেন কিছু যাত্রী।
রাজধানীর শ্যামলী থেকে নিউমার্কেটে সিএনজি করে এসেছেন রত্না বেগম। তিনি বলেন, স্বাভাবিক ভাড়া থেকে সিএনজি চালকরা ঈদ বোনাসের নামে একশ থেকে দেড়শ টাকা বেশি চাচ্ছেন। রাস্তায় বাস নেই, বাধ্য হয়ে টাকা বেশি নিলেও দিতে হচ্ছে।
ঢাকার রাস্তা ফাঁকার বিষয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ২০ তারিখ ছুটি ঘোষণা করা এবং এ বছর মহাসড়কে মোটারসাইকেল চলার অনুমতি দেওয়ায় এই সুফল পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, আমাদের হিসাব মতে, ঢাকা থেকে প্রায় ১২ লাখ মানুষ মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়িতে যাবেন। মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিলে এই ১২ লাখ মানুষকে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এতে করে রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশ পথে ভিড় দেখা যেত এবং এর কারণে যানজটও তৈরি হতো।
মোটরসাইকেলে অনেকে স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের গন্তব্য যেতে পেরেছেন এবং যাচ্ছেন যার কারণে রাস্তায় এবার যানজট কম হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক প্রধান মনিবুর রহমান বলেন, ঢাকার মধ্যে অনেক জায়গায় ফাঁকা হলেও ঢাকা থেকে মানুষ ও যানবাহন বের হবার পথগুলোতে কিছুটা যানজট আছে। আমরা রাজধানীতে বসবাসরতদের স্বাচ্ছন্দে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করছি। আমাদের ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
কেএম/এসএন