সিসি ক্যামেরা অচল, ঝুঁকিতে হাতিরঝিলের দর্শনার্থীরা
রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্র হাতিরঝিলে প্রায় ৬৮টি ক্যামেরার মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫টিতে নো সিগন্যাল দেখায়। প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে অচল এসব ক্যামেরা। এতে ঈদে বেড়াতে আসা বিপুল সংখ্যক মানুষ নিরাপত্তাঝুঁকিতে থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ উঠেছে, সেনাবাহিনী দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর বেশ কিছু সিস্টেম এলোমেলো হয়ে গেছে। মূলত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক ক্যামেরা নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। ফলে হাতিরঝিলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর ভিডিও ফুটেজ রেকর্ড হচ্ছে না।
এ ছাড়া, সংযোগ লাইন থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের অনেক কিছুই নষ্ট হওয়ার পথে যা এখনো ঠিক করা হয়নি। ক্যামেরা নষ্ট থাকায় এই বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরতে আসা ব্যক্তিরা অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
সম্প্রতি হাতিরঝিলে সিসি টিভির ক্যামেরা নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে এই বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরতে আসা ও একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি ও দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা যায়।
হাতিরঝিল প্রকল্পের তথ্য মতে, ৩০২ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হাতিরঝিল প্রকল্পটি এর নিরাপত্তার স্বার্থে প্রথমে লাগানো হয়েছিল ৬১টি ক্যামেরা পরে ক্যামেরার সংখ্যা বাড়িয়ে ৬৮টি করা হয়। এ ছাড়া, আরও কিছু গোপন ক্যামেরা আছে বলে জানা গেছে। তবে এসবের অধিকাংশ ক্যামেরায় ‘নো সিগন্যাল’ লেখা থাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে আছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। কিন্তু বর্তমানে ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা অনেকটাই অকার্যকর। ডিসপ্লের কিছু বোর্ডে লেখা উঠে আছে ‘নো সিগন্যাল’। আবার কিছু ক্যামেরায় স্থিরভাবে দেখা যাচ্ছে না ভিডিও।
এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষ বলছে, মাঝে মাঝে হাতিরঝিলে কিছু অপ্রীতিকর ও বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটে। এসব অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলায় বিশেষ ভুমিকা রাখে এসব ক্যামেরা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে কি না।
বনানী থেকে হাতিরঝিলে বেড়াতে আসা মো. রফিক ও তার স্ত্রী হাজেরা বলেন, যেহেতু হাতিরঝিল মানুষের বিনোদনের একটি জায়গা সেই জন্য সব ক্যামেরা ২৪ ঘণ্টাই ওপেন রাখা জরুরি এবং সব কিছু ঠিকঠাক রাখা কতৃপক্ষের দায়িত্ব। আশাকরি কতৃপক্ষ হাতিরঝিলের সব ক্যামেরা ঠিকঠাক রাখেবেন। সামনে ঈদ। হাজার হাজার মানুষ এখানে আসবেন। তাই সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের মাথায় রাখা উচিত।
পল্টন এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা আজগর আলী বলেন, ঢাকা শহরে ফাঁকা জায়গার বড়ই অভাব। তাই পল্টন থেকে প্রায়ই হাতিরঝিলে বেড়াতে আসি। ঈদের ছুটির কয়দিন তো প্রায় প্রতিদিন আসি। কিন্তু আজ জানতে পেলাম হাতিরঝিলের অনেকগুলো সিসি ক্যামেরা নষ্ট। আমরা তো ভাবতাম ক্যামেরা রয়েছে বখাটে বা অন্যান্য ঝামেলা থেকে এই ক্যামেরার জন্য প্রতিকার পাব। এখন শুনে সতর্ক হলাম।
সন্ধ্যার পর উত্তরা থেকে ২ সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে আসা মো. মামুন হোসেন বলেন, ‘হাতিরঝিলের পরিবেশ আগের মতো নেই। কয়েকদিন আগে জানলাম এখানের নিরাপত্তা হিসেবে যে সব সিসিটিভি আছে তা নষ্ট। ঈদের সময়ও এখানে পরিবার নিয়ে আসি কিন্তু ক্যামেরা নষ্ট জানার পর একটু শঙ্কিত আছি।’
এখানে কর্মরত একাধিক নিরাপত্তাকর্মী জানান, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক ক্যামেরা নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। ফলে হাতিরঝিলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর ভিডিও ফুটেজ দেখা যায় না। এ ছাড়া সংযোগ লাইন থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের অনেক কিছুই নষ্ট হওয়ার পথে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘হাতিরঝিল নিয়ন্ত্রণ করে একটি কতৃপক্ষ। এখানে দায়িত্বরতদের দায়িত্ব সিসি ক্যামেরা বা অন্যান্য মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখা। এটি যেহেতু আমাদের এলাকার মধ্যে পড়েছে, সেই জন্য আমাদের টহল পুলিশ এই বিনোদনকেন্দ্রে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে ২৪ ঘণ্টা নিয়োজিত রয়েছে ‘
এক প্রশ্নের জবাবে আজিমুল হক বলেন, ‘এখানে ঘুরতে আসা মানুষের নিরাপত্তা দিতে ও যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলার জন্য আমাদের পুলিশ সর্বদা নিয়োজিত থেকে কাজ করে যাচ্ছে আর ঈদের সময় এখানে পুলিশের আলাদা নিরাপত্তা থাকবে।’
তবে এসব বিষয় নিয়ে হাতিরঝিল প্রকল্পের কতৃপক্ষ বলছেন, এই প্রকল্পের সার্বিক অবস্থা উন্নতকরণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো ঠিক করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
হাতিরঝিলে দায়িত্বরত নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক রাজউকের এক সিকিউরিটি ইনচার্জ বলেন, ‘দিনে হাতিরঝিলে ৩০-৪০ জন নিরাপত্তাকর্মী কাজ করেন। রাতে কাজ করেন ২৫-৩০ জন। হাতিরঝিলে ২৪টি পয়েন্ট রয়েছে। ২৪ পয়েন্টে ২ জন করে দায়িত্ব দেওয়া হলেও পুরোদমে নিরাপত্তা দিতে প্রয়োজন হয় ৫০-৬০ জন। সেই হিসেবে নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা কম রয়েছে। অনেক ক্যামেরা কাজ করে না, যেসব জায়গায় ক্যামেরায় কাজ করে না সেই সমস্ত জায়গায় আমাদের নিরাপত্তা কর্মীরা কাজ করে। কিছু ক্যামেরা মেরামতের জন্য দেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন পানি লাগার কারণে ক্যামেরা অনেকগুলো নষ্ট হয়ে আছে।
এ বিষয়ে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর বলেন, হাতিরঝিল এলাকায় নিয়মিত পুলিশের টহল চলমান। রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে রাতেও টহল বাড়ানো হয়েছে। আমরা কোনো অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। তা ছাড়া, ঈদের দিন আমাদের স্পেশাল টহল পুলিশের ডিউটি বাড়ানো হয়েছে।
অনেক ক্যামেরা কাজ করে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্যামেরার বিষয়ে আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ এসেছে আমরা কর্তৃপক্ষকে ঈদের আগে ক্যামেরা ঠিকঠাক করার পরামর্শ দিয়েছি।
ওসি আরও বলেন, ‘হাতিরঝিলে মোট ৬৮টিরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ২০-৩০ টিতে কাজ করে না। কিছু ক্যামেরা একেবারেই সিগনাল পায় না। বিকলগুলো মেরামত করা হচ্ছে।’
ক্যামেরার সার্বিক বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং তাদের এসব বিষয়ে অবহিত করার চেষ্টা করছি যাতে করে ঈদের সময় মানুষকে ভোগান্তির শিকার না হতে হয়, যোগ করেন তিনি।
আরইউ/এমএমএ/