ঈদের কেনাকাটায় নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা ফুটপাতের বাজার

নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের ঈদের কেনাকাটার ভরসার জায়গা হলো ফুটপাতের দোকানগুলো। তারা বলছেন, ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ হারে কিন্তু সেই তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। তাই ঈদের কেনাকাটায় ফুটপাতই ভরসা। রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাতে বসা বিভিন্ন বাজার ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের ক্রেতারা জানান, রাজধানীর বড় বড় মার্কেটে গেলে কাপড়ের দাম অনেক বেশি চায়। সেই তুলনায় আমাদের আয় রোজগার হচ্ছে না। মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটার সামর্থ্য নেই। এজন্য ফুটপাতের থেকে কেনাকাটা করেই আমরা শান্তি পাচ্ছি।
রাজধানীর কাওবাজারের ফুটপাত থেকে ঈদের কেনাকাটা করেছেন বরিশালের আবির হোসেন। তিনি বলেন, এবার ঈদে বোনাস পাইনি। কোম্পানির চাকরি করে কী মনের সব আশা মেটোনো যায়! এজন্য এখান থেকে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করলাম। তিনি বলেন, ভালো মার্কেট থেকে কিনতে গেলে অনেক দাম নেয় এবং মোটা টাকা খরচ হয়। এজন্য পরিবারের লোকজনের জন্য এখান থেকে কাপড় কিনলাম।
গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের বিপরীতে রাস্তার ফুটপাত থেকে নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করেছেন পোশাক কারখানার কর্মী মামুন মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের মতো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য এটাই ভালো।
এলিফ্যান্ট রোড়ের ফুটপাত থেকে ঈদের শপিং করার সময় কথা হয় নাজমা ও রুমানের সঙ্গে। এই দম্পতি জানান, পরিবারের যদি ১-২ জন চকরিজীবী হয় তাহলে তার দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে ঈদের সময় সবার মন খুশি রাখতে হয়। যেভাবে জিনিস পত্রের দাম বেড়েছে সেই তুলনায় আমাদের মতো নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাস্তার ফুটপাতের মার্কেট।
রাজধানীর গুলিস্তানের মাজার এলাকার ফুটপাত থেকে পরিবারের সবার জন্য ঈদের কেনাকাটা করেছেন রিকশাচালক আবুল মিয়া। তিনি বলেন, রিকশা চালিয়ে আর কত টাকা হয়। তারপরও কম-বেশি আমার পরিবারের সব সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করেছি।
তিনি বলেন, আমার পরিবারের ৫ জন সদস্য ছোট ২টা ছেলে একটি মেয়ে আর আমার মা। তবে সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা করেছি ছোট মেয়েটার জন্য। সবাইকে যে এত কষ্টের মধ্যে কিছু দিতে পেরেছি এটাই আমার আনন্দ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া সুপারমার্কেটসহ আশপাশের প্রায় সব মার্কেটের সামনে ফুটপাতে সাধারণ মানুষের ভিড় রয়েছে। সব বয়সী নারী-পুরুষেররা তাদের পছন্দের মতো কেনাকাটা করছেন।
সারি সারি এসব দোকান থেকে পছন্দমতো জামাকাপড় কিনছেন অনেকে। নগরীর অনেক মানুষের নামিদামি শপিং মলে কেনাকাটার ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ্য না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফুটপাতের দোকানে ছুটছেন। প্রিয়জনকে ঈদের পোশাকসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য কিনে দেন ফুটপাত থেকেই।
নিম্ন আয়ের মানুষের কেনাকাটার জায়গা ফুটপাতে তুলনামূলক বেশি আয়ের মানুষেরও আনাগোনা দেখা যায়। অবশ্য এসব বিষয়ে নিয়ে ফুটপাতের ব্যসায়ীরা বলছেন, এবার রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের চেয়ে ফুটপাতে ক্রেতাদের একটু বেশি ভিড় ছিল। তবে বেশ ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ফুটপাতের এসব ব্যবসায়ীরা।
কেএম/এসএন
