ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে শুধু হাহাকার

স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়েছে। রক্ত পানি করা শ্রম নিঃশেষ করে দিয়েছে আগুন। আর কটা দিন পরই ঈদ। ক্ষতিগ্রস্তদের চোখেমুখে এখন শুধু হাহাকার। পুড়ে যাওয়া মালামালের মধ্যেই অনেকে খুঁজে ফেরেন বেঁচে থাকার আশা। সব হারিয়ে নিঃস্ব ব্যবসায়ীদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা।
রবিবার (১৬ এপ্রিল) সকালে ঘটনাস্থলে গেলে চোখে পড়ে ব্যবসায়ীদের আর্তনাদের চিত্র।
গতকাল দিবাগত রাতভর অবশিষ্ট মালামাল সরানোর চেষ্টা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে কাঁদছেন অনেকেই।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা শেষ হয়ে গেলাম। নিঃস্ব হয়ে গেলাম কয়েক হাজার মালিক ও কর্মচারীরা। ঈদের আগে আমাদের কী হবে? আমরা কী করব সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না! ব্যবসায়ীদের এমন আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে নিউমার্কেট এলাকা।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) মধ্যরাতে সুযোগ পেয়ে নিউমার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় প্রবেশ করেন ব্যবসায়ীরা। পুড়ে যাওয়া মালামালের মধ্যে অনেকেই খুঁজে ফেরেন বেঁচে থাকার আশা। রাতভর চলে অবশিষ্ট মালামাল নিরাপদ গন্তব্যে নেওয়ার কাজ। ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় ছিলেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেছেন, আমাদের কিছুই পাইনি। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঈদের মৌসুমের জন্য আমাদের সারা বছরের অপেক্ষা থাকে। এ জন্য কেউ কেউ সোনা বন্ধক রেখেছি আবার কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। কিন্তু ক্যাশে থাকা নগদ সব টাকাও পুড়ে শেষ হয়েছে অনেকের।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, মার্কেটটিতে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তুষের আগুনের মতো কাপড়গুলো জ্বলছে। এমনি সব পুড়ে গেছে।
আগুনে নিঃস্ব হয়েছেন প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি দোকান মালিক ও কর্মচারীরা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভালো বিক্রির আশায় শনিবার যখন সেহরি খেয়ে নিশ্চিন্ত ঘুমে ব্যবসায়ীরা ঠিক তখনই ঘুমন্ত নগরীতে হানা দেয় আগুন।
রত্না গার্মেন্টসের মালিক শাহীন বলেন, রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম ঘুমানোর পরে দেখি পুড়ে সব শেষ হয়ে গেছে। স্বর্ণ বন্ধক রেখে এবং ব্যাংক ঋণ করে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছি আমি আজ পথের ফকির হয়ে গেলাম।
নয়ন গার্মেন্টসের মালিক আমিনুর ইসলাম বলেন, কয়েক লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি করেছি মুহূর্তে মাটির সঙ্গে মিশে গেল। হৃদয়টা হাহাকার করছে। কিছুতেই এমন দুর্ঘটনা মেনে নিতে পারছি না।
ব্যবসায়ী রাজন আহমেদ আর্তনাদ করে বলেন, একদিন ফুটপাতে এভাবেই ব্যবসা শুরু করেছিলাম শরীরের রক্ত পানি করে তিনটে দোকানের মালিক হয়েছি সব শেষ হয়ে গেল। আমার স্বপ্ন শেষ। কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবো সেটি বুঝে উঠতে পারছি না।
কেএম/আরএ/
