ঈদ কেনাকাটায় ব্যস্ত রাজধানীবাসী
রাজধানী মার্কেট গুলোতে ঈদের কেনাকাটার ভিড় করতে শুরু করেছে। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল ১৬ রমজান। ইতোমধ্যে ঈদ কেনাকাটায় নেমে পড়েছেন রাজধানীর মানুষ। বিশেষ করে যারা ঈদে একটু আগেভাগে গ্রামের বাড়িতে যাবেন অথবা রমজানের শেষ ভাগে যাদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যাবে তারা আজ শনিবার (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকেই কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই।
এর মধ্যে সবচেয়ে ভিড় রয়েছে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায়। শুধু নিউমার্কেট নয় এরইমধ্যে রাজধানীর মার্কেটগুলোও জমে উঠতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরাও লাভের আশায় বুক বাঁধছেন। এদিনে রাজধানীর নিউ মার্কেটে দেখা গেছে, ছুটির দিন হওয়ায় ক্রেতাদের অনেক উপস্থিতি। যদিও ব্যবসায়েররা বলছেন রমজানের শুরু থেকেই এর আগেও ক্রেতাদের ভিড় ছিল। তবে আজ একটু ভিড় বেশি মনে হচ্ছে।
নিউমার্কেটের পোশাক দোকানদার জুলহাস বলেন, এবার ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের চাহিদা ও রুচির বিষয়টি মাথায় রেখে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ সব বয়সী মানুষের জন্য নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক আনা হয়েছে। নুর গার্মেন্টসের মালিক আবির হোসেন বলেন, রমজানের প্রথম থেকেই প্রতিদিনই বাড়ছে বেচাকেনা। আদিত্যকে তাদের ভিড় বেশি মার্কেটে।
দোকানদাররা বলছেন, বিশেষ করে দুপুরের পর ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়ে যায়। তবে শুরুর দিকে শিশুদের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে দোকানিরা জানিয়েছেন।
চলতি বছরও রোজার শুরু থেকে আসন্ন পয়লা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে নিউ মার্কেট ও আশেপাশের বিভিন্ন শপিং সেন্টারগুলোতে। বেশি বেশি ক্রেতার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বরাবরের মতো এ বছরও ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন আগাম প্রস্তুতি।
তারা বলছেন, গত কয়েক বছরে করোনা, মানুষের অর্থনৈতিক টানাপোড়েনসহ নানা বাস্তবতায় নিয়মিত বেচাকেনা নেই বললেই চলে। উৎসব ঘিরে ব্যবসাও আগের মতো নেই। তবুও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বড় পুঁজি নিয়ে ঈদবাজারে লগ্নি করছেন ব্যবসায়ীরা।
এবার পয়লা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি হিসেবে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের বেচাকেনার সুবিধার্থে সপ্তাহের সাত দিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিউ মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটির দিন মঙ্গলবারসহ অন্যান্য দিনেও নিউ মার্কেট খোলা থাকবে।
এছাড়া, রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত নিউ মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টারসহ আশেপাশে কয়েক হাজার বিপণিবিতান রয়েছে, যার অধিকাংশই শাড়ি-কাপড়, থ্রি পিস, পায়জামা-পাঞ্জাবি, ছোটদের পোশাক, প্রসাধনীর পাইকারি ও খুচরা দোকান। মূলত, রমজানের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে রাজধানীতে ধীরে ধীরে জমে উঠছে ঈদের কেনাকাটা।
ঈদ সামনে রেখে বাড়তি ভিড় হতে পারে, এ কথা মাথায় রেখে অনেকে আগেভাগেই জামা-কাপড় কেনা সেরে রাখছেন। নিউ মার্কেটে পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা নাসরিন বেগম বলেন, আমার স্বামী পুলিশের চাকরি করে ঈদের সময় তার সময় কম হয় এজন্য আগেভাগে কেনাকাটা সেরে ফেললাম। তবে এবার মার্কেটের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।
মার্কেটে এক নম্বর গেটে কথা হয় আরফান আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আজ শনিবার সরকারি বন্ধ আমি সরকারি কর্মচারী ঈদের সময় মার্কেটে অনেক ভিড় হয় এজন্য আগেভাগে কেনাকাটা সেরে ফেললাম। নিউ মার্কেটে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমী ও মৌমিতার সঙ্গে। তারা জানান, আজ কেনাকাটা করি নাই। কিছু পোশাক দেখতে এসেছি তেমন একটা পছন্দ হয়নি ঈদ সামনে রেখে পছন্দ হলে সময় মত কেনাকাটা সেরে ফেলবো।
শুধু অভিজাত শপিংমলেই নয়। ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ফুটপাতেও জমে উঠছে বেচাকেনা। রাজধানীর গুলিস্তান, মৌচাক, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, রামপুরা, বাড্ডা, মতিঝিল, মিরপুর এলাকায় ফুটপাতজুড়ে হরেক রকমের পোশাক সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। সাধ ও সাধ্যের হিসাব মেলাতে এই দোকানগুলোতে ভিড় করছেন অনেক মানুষ। সন্তানের পাশাপাশি নিজেদের জন্যও পছন্দসই কেনাকাটা করছেন তারা।
ক্রেতারা বলেন, শপিংমলগুলোতে দাম অনেক বেশি। সে তুলনায় ফুটপাতে কম দামে ভালো মানের পণ্য পাওয়া যায়। ফুটপাতের দোকানে আসা এই ক্রেতাদের বেশির ভাগই নিম্নআয়ের। আর ঈদকে ঘিরে তাদের নাগালের দামেই নিত্য নতুন সব পোশাক এনেছেন ব্যবসায়ীরা। ২০ রমজানের পর ফুটপাতে বেচাবকেনা আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।
কেএম/এএজেড