ফ্রাঞ্চাইজি বাস সার্ভিসেও ফেরেনি শৃঙ্খলা, মেলেনি মুক্তি
রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্দেশে চালু করা হয়েছিল ফ্রাঞ্চাইজি বাস সার্ভিস ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলনই ঘটেনি। কথা ছিল একটি রুটে একটি কোম্পানির বাস চলাচল করবে। যাত্রীদের নিয়ে টানাহেঁচড়া হবে না। বন্ধ হবে অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
অথচ নগর পরিবহন চালু করার পরও অবস্তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং অবস্থা যেন আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে। এমনটাই অভিযোগ নগর পরিহেনে চলাচলকারি যাত্রীদের।
নগর পরিবহনের রুটগুলোতে ই-টিকিটিং এখনো মুখ্য বিষয় নয়। প্রথমদিকে শৃঙ্খলা থাকলেও এখন শৃঙ্খলা রক্ষা করাটাই হয়েছে বড় চ্যালেঞ্জ। যাত্রী টানতে হুড়োহুড়ির সেই পুরনো চিত্রই দেখা গেছে সরেজমিনে। ঢাকা নগর পরিবহন চালু হওয়াতে গণপরিবহন একটু যাত্রীবান্ধব হয়েছে এমনটা মনে হয়নি যাত্রীদেরও।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্পট ঘুরে যাত্রী হয়রানির চিত্রই পাওয়া গেছে। ফ্রাঞ্চাইজি বাস সার্ভিস চালুর কথা যখন ২০১৬ সালে প্রথম মেয়র আনিসুল হক বলেন, তখন বলা হয়েছি রুটগুলোতে ৬ কোম্পানির ৬ রংয়ের বাস চলবে। রাজধানীর সমস্ত বাসকে এই ছয় কোম্পানির আওতায় আসতে হবে।
সে অনুযায়ী ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর চালু হলো ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। ঘোষণা অনুযায়ী যে রুটগুলোতে ঢাকা নগর পরিবহনের বাস চলবে সেই রুটগুলোতে প্রাইভেট কোম্পানির বাস চলতে পারবে না। প্রাইভেট কোম্পানির বাস চলবে ঢাকা নগর পরিবহনের আওতাতেই।
প্রথমদিকে কিছুদিন এমন নিয়ম ঠিক ছিল। রুটগুলোতে শুধুই ঢাকা নগর পরিবহনের বাস চলত। কিন্তু দেখা গেল রুটগুলোতে ঢাকা নগর পরিবহনের বাসের পাশাপাশি প্রাইভেট কোম্পানির বাসও চলছে। তখন ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট চালিয়ে এসব বাসকে ধরা হতো।
কিন্তু দিন যত যেতে থাকে নিয়ম যেন ততই হারিয়ে যেতে থাকে। মঙ্গলবার (২১মার্চ) সরেজমিন দেখা গেল, রুটের অন্য বাসগুলো নিয়ম না মেনে যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী তুলছে-নামাচ্ছে। এসব বাস ঢাকা নগর পরিবহনের বাসের সামনে গিয়ে যাত্রী তুলছে। এমন প্রতিযোগিতর কারণে ঢাকা নগর পরিবহন পেরে উঠছে না বলেই জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কাউন্টারকর্মী।
বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় ২১, ২২ ও ২৬ নম্বর রুটে শুধুই ঢাকা নগর পরিবহনের বাস চলার কথা। কিন্তু দেখা গেল, নগর পরিবহনের বাসের বাইরেও এই তিনটা রুটে চলছে আরও অনেক কোম্পানির বাস। এসব রুটের ভিন্ন ভিন্ন পথে গ্লোরি, মৌমিতা, আশিয়ান, গ্রিন বাংলা, স্বাধীন, অভিনন্দন, পরিস্থান, প্রজাপতি, আনন্দ, বোরাক, আলদী, রাইদা, মালঞ্চ, মিডলাইন, মিডওয়ে পরিবহন ও ১৩ নম্বর বাস চলাচল করতে দেখা গেছে।
এ অবস্থায় ঢাকা নগর পরিবহনের বাইরের এসব বাস তুলে দিতে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি আবারও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা শুরু করেছে। ফলে ‘প্রতিকার’ চেয়ে বাস মালিকরা এ বিষয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে তার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ডিটিসিএ নির্বাহী পরিচালক এবং বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সদস্য সচিব সাবিহা পারভীন বলছেন, অবৈধ বাস চলাচলে ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করছে। তবে বৈধ রুট পারমিট থাকলে সেগুলো চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে না।
বাস মালিকদের এমন আচরণে নিয়ে ক্ষুব্ধ বাস রুট রেশনলাইজেশন কমিটির প্রধান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ১ মার্চ কমিটির সভা শেষে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ঢাকায় গণপরিবহনের নাজুক এবং বিশৃঙ্খল অবস্থার পেছনে অনেক চক্র ও স্বার্থান্বেষী মহল রয়েছে। গণপরিবহনের নাজুক ও বিশৃঙ্খল অবস্থা কাটাতে যত বাধা-বিপত্তিই আসুক তা মোকাবিলা করব।
ঢাকা নগর পরিবহনের বাসের রুটে অন্য বাস চলাচল প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনয়েত উল্লাহ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, নগর পরিবহনের রুটগুলোতে আমরা আগের মতোই বাস চালাতে চাই। ঢাকা নগর পরিবহনে গিয়ে লাভ নাই। যানজটের কারণে সারাদিনে দুইটা ট্রিপ হয় না।
এক প্রশ্নের জবাবে এনায়েত উল্লাহ বলেন, বাস রুট রেশনালাইজেশনে যেতে মালিকদের আগ্রহ নেই। উনারা বিজ্ঞাপন দিলেও কেউ আসেনি।
এনএইচবি/এমএমএ/