রাজউকের নথি গায়েব বারবার, সুরাহা কবে?
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নথি গায়েবের ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। এর আগেও অনেকবার গ্রাহকের নথি গায়েব হয়েছে রাজউক থেকে। কিন্তু কেন, কীভাবে, কারা এসব নথি গায়েব করেছিল সেসবের কোনো সুরাহা হয়নি কখনো।
এবারও যে নথি গায়েবের ঘটনার কোনো কূলকিনারা হবে তেমনটি দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। যদিও আদালতের নির্দেশে ঘটনা অনুসন্ধানে নেমেছে রাজউক।
প্রসঙ্গত, গত ৬ ডিসেম্বর রাজউকের অনলাইন থেকে ৩০ হাজার নথি গায়েব হয়ে যায়। বিষয়টি আদলতের নজরে আনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রাউজকের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নথি গায়েবের মত ঘটনা অতীতে আরও বহুবার ঘটেছে। এবারে একসঙ্গে অনেক নথি গায়েব হওয়ার ঘটনার কারণেই এত আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, নথি গায়েবের ঘটনা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। নথি গায়েব করেই ভবন নির্মাণে অনিয়ম করা হয়। অনিয়ম করলেও রাজউকের কিছু বলার থাকে না। কারণ রাজউকের কাছে কোনো প্রমাণ নাই। আর ভবনমালিক দাবি করেন যে, তিনি প্ল্যান অনুযায়ীই নির্মাণকাজ করছেন।
নথি গায়েব হওয়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হওয়া রোধে রাজউক অনলাইনে সেবা দেওয়া শুরু করে। সেটা ২০১৯ সালের ঘটনা। অনলাইনে যাওয়া হয়েছিল নথিকে আরও নিরাপদ করার লক্ষ্যে। অথচ নথি গায়েবের সবচেয়ে বড় অঘটনটা ঘটল অনলাইন থেকেই।
এতে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাও দেখছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলছেন, যেকোন অনলাইন স্টোরেজের ক্ষেত্রে ব্যাকআপ থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাকআপ নাই কেন? এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অথচ ব্যাকআপ নাই এটা মেনে নিতে পারছেন না তারা।
রাজউকের বিরুদ্ধেই গাফিলতির অভিযোগ
রাজউকের অনলাইন থেকে ৩০ হাজার গ্রাহকের নথি হারিয়েছে ৬ ডিসেম্বর। অথচ রাজউক নিজেই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়নি। গতানুগতিক থানায় একটা জিডি করে চুপচাপ ছিল। অথচ এত বড় ঘটনায় রাজউকের নিজেরই উচিত ছিল কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি করা এবং সরকারের অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া। কিন্তু রাজউক সেটা না করে চুপ ছিল।
নথি গায়েবের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাইকোর্টে আবেদন করলে হাইকোর্ট রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে কারণ জানতে চেয়ে আদেশ জারি করেছেন।
হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, এক মাসের মধ্যে হাইকোর্টকে নথি গায়েবের কারণ জানাতে হবে রাজউক চেয়ারম্যানকে। এ ব্যাপারে রাজউকের কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না।
জানতে চাইলে পরিবেশ ও নগর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খানও ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, রাজউক থেকে নথি গায়েবের অনেক ঘটনা আগেও ঘটেছে। কিন্তু কোনো ঘটনারই সুরাহা রাজউক করতে পারেনি বা করেনি।
এক প্রশ্নের জবাবে পবা চেয়ারম্যান বলেন, অবশ্যই এটা রাজউকের বড় গাফিলতি যে তারা জানার পরও ঘুমাচিছল। এ ছাড়া, কারিগরি দুর্বলতার বিষয়টিও এই ঘটনায় চোখে পড়ছে। বলা হচ্ছে সার্ভার থেকে হাওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা জানি এমন ধরনের সার্ভারের ব্যাকআপ থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাকআপ কই?
গত ২৯ ডিসেম্বর এক দৈনিকে ৩০ হাজার গ্রাহকের নথি গায়েবের ঘটনা প্রকাশিত হয়। যেসব গ্রাহকের নথি হারিয়েছে তারা ২০১৯ সালের মে থেকে ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেতে আবেদন করেছিলেন।
এনএইচবি/এমএমএ/