শীতের কাপড়: নিম্নবিত্তের ভরসা ফুটপাত
করিম শেখ। বাড়ি গাইবান্ধায়। জীবিকার সন্ধানে ঢাকার সড়কে সড়কে রিকশা চালিয়ে জীবন চালান। যা আয় হয় তা দিয়ে ঢাকায় নিজের খরচ আর গ্রামে থাকা সংসার দুটোই চালাতে হয়।
এরই মধ্যে দেশের উত্তর জনপদে জেঁকে বসেছে শীত। এই সময়টাতেই অনেকদিন পর গ্রামে যাবেন করিম শেখ। তাই বাড়ি যাওয়ার আগে সন্তান আর পরিবারের জন্য শীতের নতুন জামা কিনতে হাজির হয়েছেন রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাতে। সেখান থেকেই ছেলের জন্যে কিনেছেন শীতের প্যান্ট ও জ্যাকেট। সুলভমূল্যে ফুটপাত থেকে এসব জিনিস কিনতে পেরে ভীষণ খুশি করিম।
শুধু করিম শেখ নয়,রাজধানীর ফুটপাতগুলোতে এখন নিম্মবিত্ত মানুষদের ভীড়। এমনকি মধ্যবিত্তরাও আছেন সেই ভীড়ে। শপিংমলের কাপড়ের দাম নাগালের বাইরে হওয়ায় নিম্নবিত্তরা বরাবরই ফুটপতাকে বেছে নেন।
রাজধানীর শপিংমলগুলোতে এমনিতেই কাপড়ের দাম বেশি। তার উপর আবার সাম্প্রতিক সময়ে সবধরণের নিত্যপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কাপড়ের দামও। ফলে সব ধরনের পোশাক বিক্রি হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি দামে। সঙ্গত কারণে নিম্ববিত্তের স্বাদ থাকলেও সাধ্য নেই শপিংমলের ভিতরে পা রাখার।
গত কয়েকদিন রাজধানীর গুলিস্তান, সদরঘাট, পল্টন, দৈনিকবাংলা, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত ঘুরে দেখা গেছে, শীতের পোশাকে সয়লাব। অন্যান্য সময় বিভিন্ন পসরা নিয়ে বসলেও এই সময়ে শুধুই শীতের পোশাক। সঙ্গত কারণেই ফুটপাতগুলোতে স্বল্প আয়ের ক্রেতাদের ভিড় লেগে আছে।
ফুটপাতের বাইরে ভ্যানে করেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে শীতের পোশাক। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যানগুলোতে ক্রেতার কমতি নেই।
সদরঘাটের ফুটপাতের ভ্যানে শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন নাজমুল করিমভ পেশায় লঞ্চ শ্রমিক নাজমুল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘একটা জ্যাকেট কিনলাম ৩০০ টাকায়, লঞ্চে প্রচুর শীত লাগে। এই জ্যাকেট মার্কেটে কিনলে ১৫০০-২০০০ টাকা লাগবে। এত টাকা কই পামু। যে কয় টাকা বেতন পাই বউ-পোলার পিছনেই খরচ হইয়া যায়।’
গুলিস্থানের ফুটপাতে মেয়ের জন্য কাপড় কিনতে এসেছেন কোহিনূর খাতুন। তিনি একটি এলাকায় রান্নার কাজ করেন। স্বল্পমূল্যে কাপড় কিনতে পেরে উচ্ছাসিত কোহিনূর ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘প্রতি শীতেই আমি এইনে কাপড় কিনবার আহি। মাইয়ার লাইগা, নিজের লাইগা কাপড় নেই। মার্কেটের কাপড়ের যেই দাম দূর থেইক্ষা দেহা ছাড়া কিনবার সাধ্য নাই।
ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত শীতের মওসুম হওয়ায় শীতের কাপড়ের চাহিদা এখন সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছর শীত মওসুম আসলেই এর চাহিদা বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আগামী দুই মাস তারা ভালো ব্যবসা করবেন। আর ক্রেতারা খুশি কম টাকায় নিজের পছন্দের জামা কিনতে পারায়।
ফুটপাতে দীর্ঘদিন কাপড় বিক্রি করেন রহমত মিয়া। তিনি বলেন, এখনো বিক্রি তেমন শুরু হয়নি, শীত বাড়লে বিক্রি বাড়বে। এখন আগের থেকে কাপড়ের কিছু দাম বেড়েছে, তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
এনএইচবি/এমএমএ/