ঢাকার প্রথম পানির ট্যাংক দখল করে চাঁদাবাজি!
ঢাকার সর্বপ্রথম পানি সরবরাহকারী ট্যাংকটি রাজধানীর পুরাণ ঢাকায় অবস্থিত। যা দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত থাকায় বর্তমানে দখলদারদের হাতে। ট্যাংকটি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মাজার ব্যবসা এবং পাল্লা দিয়ে চলে চাঁদাবাজী ৷ ট্যাংকটি ঢাকা ওয়াসার অধীনে থাকলেও বেদখল হওয়ার বিষয়ে কিছুই জানে না ঢাকা ওয়াসা। এদিকে মাজার সংশ্লিষ্টরা বলছে পানির ট্যাংকটি লিজ নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ঢাকা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর ১৮৬৪ সালে পৌরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য নবাব পরিবার আর্থিক সহায়তা করে। এ অর্থ দিয়ে তখন প্রথম এ পানির ট্যাংকটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর পুরান ঢাকার কলতাবাজার এলাকায় অবস্থিত ঢাকার প্রথম পানির ট্যাংক। এটি এখন আর ব্যবহৃত হয় না,পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ট্যাংকের নিচে গড়ে তোলা হয়েছে মাজার। এর একপাশে সীমানাপ্রাচীর ভেঙে করা হয়েছে মাজারে ঢোকার গেট। ভেতরে তৈরি করা হয়েছে রয়েছে ৩টি কক্ষ। ট্যাংকটির সীমানাঘেষে বানানো হয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান।
খন্দকার মাহমুদুল হাসানের ‘বাংলাদেশের প্রথম ও প্রাচীন’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৮৬৪ সালে ঢাকা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর পৌরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য নবাব পরিবার আর্থিক সহায়তা করে। ফলে ১৮৭৮ সালের ২৪ মে থেকে ঢাকাবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়।
এই সরবরাহ করার জন্য পানির ট্যাংকটি নির্মিত হয়েছিল। তবে এরও আগে ঢাকা শহরে সাক্কা বা ভিস্তিওয়ালারা গত শতাব্দীর ষাটের দশক পর্যন্ত মশকের সাহায্যে পানি সরবরাহের কাজ করত। সাক্কারা যেখানে বাস করত, তা এখন সিক্কাটুলী নামে পরিচিত।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এসব দোকানগুলো থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলে মাজারের লোকজন। ফুটপাতের পাশে বসা চটপটি-ফুচকার দোকান, ডিমের দোকান থেকেও তোলা হয় চাঁদা। দৈনিক ও মাসিক চুক্তিতে এসব দোকান ও সবজি বিক্রেতাদের থেকে তোলা হয় একশ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া, সন্ধ্যার পর মাজারের ভেতরে বসে সিদ্ধির আসর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দোকানদার বলেন, আমরা এটা ভাড়ার বিনিময়ে ব্যবহার করি। জায়গাটা তো ওয়াসার কিন্ত তারাই আমাদের ভাড়া দিয়েছে। মাজারের লোকজনই এসব দেখাশোনা করে।
মাজারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা হয় ঢাকাপ্রকাশ-এর। তারা জানান, এই ট্যাংকি আগে ওয়াসার ছিলো এরপর এটিকে ব্যবহার করা হয় না তখন থেকেই লিজ নিয়ে আমরা দরবার শরীফ হিসেবে ব্যবহার করে আসছি।
চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে না। আমাদের দরবার শরীফকে ভালোবেসে যারা যা দেন আমরা নেই। চায়ের দোকানগুলো ১০০ করে টাকা দেয়। আমরা কাউকে জোর-জুলুম করি না।
দোকানদার থেকে চাঁদা তোলা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারও থেকে এমন কিছু নেওয়া হয় না। মানুষ খুশি হয়ে যা দেয় তা নেওয়া হয়। আর সীমানা ঘেষে যে চা দোকানদাররা আছেন তারা ১০০ করে দেন আমরা যারা দরবার দেখাশুনা করি তাদের জন্য।
এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, এই মাজারকে ঘিরে প্রতিনিয়ত মাদকের আড্ডা বসে। এর আশপাশ দিয়ে রাতে চলাচল করা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এই স্থানটিকে দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ঢাকা ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম শহীদ উদ্দিন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমরা ব্যাপারটা শুনেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
এমএমএ/