সরিয়ে নেওয়া হবে ভিক্টোরিয়া পার্কের খাবার দোকান
রাজধানীর পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের (ভিক্টোরিয়া পার্ক) মাঝে নির্মিত খাবার দোকানটি পার্কের মাঝখান থেকে সরিয়ে পার্কের বাইরে কোনায় বসানো হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এরই মধ্যে বন্ধ হয়েছে খাবার দোকানের নির্মাণকাজ, নতুন স্থান পরিদর্শন করেছে সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি দল।
বিষয়টি ঢাকাপ্রকাশকে জানিয়েছেন ‘বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ’ এর আহ্বায়ক পরিষদের সদস্য সচিব আখতারুজ্জামান খান।
এর আগে বাহাদুর শাহ পার্কে যেন খাবারের দোকান নির্মাণ না করা হয় এজন্য চলতি মাসের ৮ তারিখ মেয়র বরাবর স্মারকলিপি দেয় ‘বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ’ ও ‘গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’। এরপর ১০ তারিখে মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করেন উভয় সংগঠনের প্রতিনিধি দল।
তারা মেয়রের কাছে তিনটি দাবি তুলে ধরেন-
১. খাবারের দোকানটি পার্কের মাঝখান থেকে সরিয়ে স্তম্ভের পেছনে স্থাপন করবেন
২. পার্কের চারপাশে বাউন্ডারি (বেষ্টনী) দেবেন এবং
৩. ইতিহাসের সাক্ষী ভাস্কর্যটির গায়ে মুছে যাওয়া লেখাগুলো নতুন করে স্থাপন করবেন।
প্রতিনিধি দলের সবগুলো দাবিই মেনে নেন মেয়র। সে সময়ই মেয়য় আশ্বস্ত করেন যে খাবার দোকান মাঝখান থেকে সরিয়ে পার্কের কোনায় নেওয়া হবে এবং এরই ধারাবাহিকতায় আজ পার্কের কোনায় খাবার দোকান নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি দল। পার্কের মাঝখানে নির্মিত দোকানটি সরিয়ে নিয়ে বসানো হবে পার্কের বাইরের উত্তর-পূর্ব কোনায় অর্থাৎ বাথরুমের পেছনের খালি জায়গায় যেখানে পরিত্যক্ত কয়েকটি বাস পড়ে রয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকাপ্রকাশ-কে বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক পরিষদের সদস্য সচিব আখতারুজ্জামান খান বলেন, আমরা ৮ তারিখে মেয়র কার্যালয়ে স্মারক লিপি দিয়েছি। মেয়র কার্যালয়ে স্মারক লিপি দিলে তারা আমাদের ৮ তারিখ ডাকে। ১০ তারিখে মেয়রের সঙ্গে বৈঠক হয়। আমাদের সঙ্গে ৪টা সংগ্রাম পরিষদ ছিল। পার্কে যারা হাঁটাহাঁটি করে তাদের নিয়ে এই সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। আর আমাদের সঙ্গে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট একই সঙ্গে স্মারক লিপি প্রদান করেন। মেয়র আমাদের আশ্বস্ত করেন যে এখান থেকে খাবার দোকান সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি আমাদের সহযোগিতা করবেন। যেখানে পুরনো বাসগুলো পড়ে থাকে সেখানটা পরিষ্কার করে সেখানে দোকানটা সরিয়ে নেবেন। ওয়াশরুমের পেছনে খালি জায়গায় খাবারের দোকানটা সরিয়ে নেওয়া হবে। আমরা যে তিনটা দাবি উত্থাপন করি সেসব তিনি মেনে নেন। দাবিগুলো হলো- খাবার দোকান সরিয়ে নেবেন, ১৮৫৭ সাল খোদাই করা স্তম্ভ ব্রিটিশ বিরোধী স্থাপনা পুনরায় লেখবেন এবং পার্কটির ধার দিয়ে সীমানাপ্রাচীর দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ হাসান বলেন, অবশেষে খাবারের দোকানটি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই সংবাদটি আনন্দের। মেয়র। মহোদয় ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।
সুমন দাস নামের একজন বলেন, পার্ক থাকবে সুন্দর, হাঁটাচলা ও বসার জন্য মনোরম জায়গা হবে। পার্কে কেন খাবারের দোকান থাকবে? অবশেষে এটি পার্কের বাইরের কোনায় বসবে জেনে ভালো লাগছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ধন্যবাদ।
জানা যায়, সিটি করপোরেশন থেকে ইজারা নিয়ে অস্থায়ী ফুডভ্যান নির্মাণের কথা থাকলেও সেখানে স্থায়ী খাবারের দোকান বসাচ্ছিল ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠান। কাজ শুরুর পরপরই আন্দোলন শুরু করেন স্থানীয়রা এবং পার্কে হাঁটতে আসা লোকজনের। পার্কে খাবার দোকান নির্মাণের প্রতিবাদে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বিভিন্ন সংগঠন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় নানা সমালোচনা। স্থানীয়দের তোপের মুখে রাতের আঁধারেই চলতে থাকে দোকান নির্মাণের কাজ। এরপর মেয়রের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয় দোকান নির্মাণের কাজ।
৮৫ কাঠারও বেশি আয়তনের পার্কটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও দিনে দিনে অনিরাপদ হয়ে উঠছে দর্শনার্থীদের জন্য। আগে লোহার গ্রিল দিয়ে পুরো পার্ক আটকানো থাকলেও এখন পুরোটা খোলা। এই সুযোগে পার্কে আসা মানুষের প্রায়ই পড়তে হয় ছিনতাইকারীদের কবলে। শুধু তাই নয়, সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার পর থেকেই এই পার্কে বেড়েছে নানা ধরনের অপরাধ। অনেকটা অপরাধীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে এই পার্ক। স্মৃতিসৌধের উপরে চলে মাদকের আড্ডা। মাদকাসক্ত অনেক পথশিশু ও কিশোরদের আবাস্থলে পরিণত হয়েছে এটি। মাদক ব্যবসার মূল কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করছে কয়েকটি সিন্ডিকেট।
বর্তমানে আশপাশে ভ্রাম্যমাণ হকাররা খাবারের পসরা সাজিয়ে বসায় এমনিতেই পার্কের চারপাশের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পথে।
ঐতিহ্যবাহী পার্কটি ২০২০ সালে সাজানো হয় নতুন আঙ্গিকে। বিপুল অংকের টাকা খরচ করে সংস্কারের মাধ্যমে এর আধুনিকায়ন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
এসএন