চুরি করে টানা মোটরসাইকেল বলে বিক্রি করতেন তারা
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোটরসাইকেল চোর চক্রের মূল হোতাসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) শনির আখড়া ও ধলপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের নাম-নূর মোহাম্মদ, রবিন, সজল, মনির ও আকাশ।
পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার চোর চক্রটি ঢাকা মহানগর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মোটর সাইকেল চুরি করে আসছিল। চক্রের মূল হোতা নূর মোহাম্মদ তার বন্ধু রবিনের সঙ্গে দ্রুততম সময়ে বড়লোক হওয়ার জন্য মোটর সাইকেল চুরি করত।
এসব চোরাই মোটর সাইকেল বিক্রি করার জন্য তারা দোহারে সজলকে তাদের চক্রের সদস্য হিসেবে যুক্ত করে। সজল ও মনির দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের চোরাই মোটরসাইকেল ইন্ডিয়ান বর্ডার ক্রস বা টানা গাড়ি বলে বিক্রি করত। প্রতিটি চোরাই মোটর সাইকেল তারা ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৩টি চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
পুলিশ জানায়, ডিএমপির ওয়ারী এবং গেন্ডারিয়া থানার ২টি চুরি মামলা তদন্তে সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা, গোয়েন্দা সংবাদ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় চোর চক্রকে ধরার জন্য গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগ, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তার চোর চক্রটি ঢাকা মহানগর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মোটর সাইকেল চুরি করে আসছিল।
ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, তিনি মূলত জুরাইন এলাকায় একটি কাঠের দোকানে নকশার কাজ করতেন। আগে তার বাসা ছিল কেরানীগঞ্জ হাসনাবাদ এলাকায়। একদিন হাসনাবাদ গলির ভেতর চা দোকানে গ্রেপ্তার রবিনের সঙ্গে পরিচয় হয়। দুই জন মিলে পরিকল্পনা করে, কীভাবে দ্রুততম সময়ে ধনী হওয়া যায়।
নুর মোহাম্মদ রবিনকে বলেন, তার কাছে করাত ধার দেওয়ার রেদ আছে যা দিয়ে মোটর সাইকেলের চাবি পাতলা করে ‘মাস্টার কি’ বানানো যাবে। পরিকল্পনা মোতাবেক রবিনের জিক্সার মোটর সাইকেলের চাবি রেদ দিয়ে ঘষে পাতলা করে শারিঘাট, হাসনাবাদ, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে পার্ক করা একটি জিক্সার মোটর সাইকেল চুরি করার উদ্দেশে প্রথমে পরীক্ষামূলক চেষ্টা করে এবং মোটরসাইকেলটি স্টার্ট হয়ে গেলে তারা মোটর সাইকেলটি চুরি করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তারা এ চাবিকেই ‘মাস্টার কি’ হিসেবে ব্যবহার করে দুই বন্ধু দীর্ঘদিন ধরে মোটর সাইকেল চুরি করে আসছেন।
ডিবি প্রধান বলেন, চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করার জন্য তারা দোহারে সজলকে তাদের চক্রের সদস্য হিসেবে যুক্ত করেন। ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে নিরাপদ রোড হিসেবে পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়ে মাওয়া রোডের শ্রীনগর বাইপাস হয়ে মেঘুলা বাজার, দোহার রুট হিসেবে ব্যবহার করে। অন্যদিকে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কেরাণীগঞ্জ, জয়পাড়া ও দোহার এলাকা যাওয়ার রুট হিসেবে ব্যবহার করেন। সজল ও মনির দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের উক্ত চোরাই মোটরসাইকেল ইন্ডিয়ান বর্ডার ক্রস গাড়ি বলে বিক্রি করে আসছিলেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, তিনি নিজেও বড়লোক হওয়ার নেশায় দোহারের মেঘুলা বাজারের একজন ধনী বেকারি ব্যবসায়ীর মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু মেয়ের মা-বাবা তাদের মেয়ের সঙ্গে সজলের সম্পর্ক ছিন্ন করলে সজল হতাশ হয়ে বড়লোক হওয়ার নেশায় আসামি নূর মোহাম্মদ ও রবিনদের চক্রে যোগ দেন।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, গ্রেপ্তার সজল, মনির ও আকাশদের মূল কাজ ছিল দোহার ও আশে পাশের এলাকা থেকে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে বের করা। প্রতিটি চোরাই মোটরসাইকেল তারা ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। বিক্রির টাকা নূর মোহাম্মদ ৪০ শতাংশ, রবিন ৩০ শতাংশ ও অবশিষ্ট টাকা অন্যান্যরা নিতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা আরও জানান, তারা এ পর্যন্ত ৫০০টিরও বেশি মোটরসাইকেল চুরি করেছেন তারা। ২০১৫ সাল থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছেন তারা।
গ্রেপ্তার নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪টি মামলা, রবিনের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা এবং অন্যান্য তিন জনের বিরুদ্ধে ১টি করে মামলা আছে বলেও জানান ডিবি প্রধান।
কেএম/এমএমএ/