লোডশেডিং বেড়েছে রাজধানীতে
রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে লোডশেডিং বেড়েছে। ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, শিডিউল অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় এক ঘণ্টা অফিসিয়ালি লোডশেডিং হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন।
নগরীর বিভিন্ন স্থানে এলাকাভেদে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে তিন থেকে চার ঘণ্টা। এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। লোডশেডিংয়ের এই যন্ত্রণা থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে তা নিয়ে মানুষের মধ্যে চলছে আলোচনা।
রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ করে দুটি কোম্পানি। ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)।
এর মধ্যে ডিপিডিসির গ্রাহক সংখ্যা ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৮২৬ জন। অন্যদিকে ডেসকোর গ্রাহক সংখ্যা ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯০ জন।
গত ১৯ জুলাই প্রথম লোডশেডিংয়ের শিডিউল ঘোষণা করতে গিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হবে। এলাকাভেদে এবং কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং সেটা বলে দেওয়া হবে।
মন্ত্রী আরও জানিয়েছিলেন, সাতদিন পর নতুন করে শিডিউল ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সাতদিন তো দূরের কথা, গত ২৫ দিনেও লোডশেডিং এর শিডিউল দেয়নি বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রগুলো।
তারপর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে লোডশেডিংও বেড়েছে অনেক।
ঢাকা ও আশপাশের ৩৬টি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ডিপিডিসি। ঢাকার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎসেবা দেয় আদাবর, আজিমপুর, বনশ্রী, বাংলাবাজার, বংশাল, বাসাবো, ডেমরা, ধানমন্ডি, ঝিগাতলা, জুরাইন, কাকরাইল, কামরাঙ্গীরচর, খিলগাঁও, লালবাগ, মানিকনগর, মাতুয়াইল, মগবাজার, মতিঝিল, মুগদাপাড়া, নারিন্দা, পরীবাগ, পোস্তগোলা, রাজারবাগ, রমনা, সাতমসজিদ, শ্যামলী, শেরেবাংলা নগর, শ্যামপুর, স্বামীবাগ ও তেজগাঁও এলাকায়।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জেরও কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ডিপিডিসি। এলাকাগুলো হলো- ফতুল্লা, কাজলা, পূর্ব ও পশ্চিম নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও শীতলক্ষ্যা।
সোমবার (১৫ আগস্ট) 'সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ডিপিডিসির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো লোডশেডিং নেই। তাদের ওয়েবসাইটে ঘোষণায় লেখা আছে, ‘এই মুহূর্তে ডিপিডিসি এলাকাতে কোনো লোডশেডিং নেই। তবে লোড কম বরাদ্দের প্রাপ্তিতে লোড শেডিং আরোপিত হতে পারে বিধায় হালনাগাদ তথ্য জানার জন্য সময়ে সময়ে ডিপিডিসি’র ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
অর্থাৎ ডিপিডিসির ওয়েবসাইটে লোডশেডিংয়ের ঘোষণা না থাকলেও মাঝে মাঝে হতে পারে এমন ঘোষণাও দিয়ে রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে গ্রাহককে হালনাগাদ তথ্যের জন্য কিছু সময় পর পর ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে বলা হয়েছে।
মালিবাগের বাসিন্দা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তরিকুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, শিডিউল অনুযায়ী প্রতিদিন এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ যায়। দিনে একবার যাবেই। রাতেও একবার যায়। দিনে একঘণ্টা লোডশেডিং থাকলেও রাতে ৩০/৪০ মিনিট বিদ্যুৎ থাকে না।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মিল্টনও একই কথা বলছেন। মিল্টনের দাবি, দিনে তো একঘণ্টা লোডশেডিং হয়ই, রাতেও লোডশেডিং হয়। এমনও হয়েছে রাত ১টার সময়ও লোডশেডিং হয়। শিডিউলে কিন্তু এই লোডশেডিংটা নাই।
অন্যদিকে মিরপুর, পল্লবী, কাফরুল, কল্যাণপুর, ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান, বনানী, মহাখালী, উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, বারিধারা, বাড্ডা, টঙ্গী ও পূর্বাচলসহ প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ডেসকো।
ডেসকোর ওয়েবসাইটে গিয়ে সোমবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় দেখা যায়, প্রতিটি এলাকাতেই তিন ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ে সূচি দেওয়া রয়েছে। তাদের শিডিউলে দেখা যায়, অভিজাত এলাকা গুলশানেও তিন ঘণ্টা লোডশেডিং রাখা হয়েছে।
অবশ্য সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রবিবার এক সেমিনারে বলেছেন, আশা করছি সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সঙ্কট উত্তরণে নানামুখী প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য তিনি সবার প্রতি ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে।
আরইউ/এনএইচবি/টিটি