'ভাড়া বেড়েছে সবাই জানে চার্ট লাগবে কেন'
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছামতো বাসের ভাড়া বাড়ানোর অভিযোগ করেছেন রাজধানীর যাত্রীরা। একেক পরিবহনে একেক রকম বাড়তি ভাড়া আদায় চলছে বলে জানান তারা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চার্টও নেই অনেক বাসে। এ নিয়ে যাত্রী ও পরিবহনকর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে অনেক স্থানে।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে মিরপুরের শেওড়াপাড়া থেকে শিকড় পরিবহনে আজিমপুর আসেন বাস যাত্রী নজরুল মিয়া। আগে তিনি ভাড়া দিতেন ২৫ টাকা। কিন্তু আজ হেলপার তার কাছ থেকে নিয়েছেন ৩৫ টাকা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নজরুল মিয়া। এসময় নজরুল মিয়া পরিবহনকর্মীকে বলেন, ভাড়া বেড়েছে বুঝলাম চার্ট কোথায়? উত্তরে বাসের কনডাকটর বলেন, ‘ভাড়া বেড়েছে দেশের সবাই জানে। চার্ট লাগবে কেন? তালিকা না দেখে বাড়তি ভাড়া দিতে না চাইলে বাস থেকে নেমে পড়েন।’
ভাড়ার বিষয় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা হলে সবাই বলেন, বাসে উঠলেই ৫ থেকে ১০ টাকার ভাড়া এখন ১৫ থেকে ২০ টাকা দিতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এসব ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা। যাত্রীদের অভিযোগ, এখন পরিবহনে ৫ টাকা ১০ টাকা ভাড়া দিলে তারা যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। মনে হচ্ছে ৫ টাকা ১০ টাকার ভাড়া উঠে গেছে। প্রাইভেট সিএনজির মতো বাসের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর, আজিমপুর, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ মোড়, প্রেসক্লাব ও পল্টন এলাকায় চলাচলরত বাসের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এসময় দেখা গেছে, ভি.আই.পি.-২৭, ভিক্টর, স্কাই লাইন, শতাব্দী পরিবহন, শিকড় পরিবহন, ৮ নম্বর লোকাল, ৭ নম্বর লোকাল, ফাল্গুন, ধামরাই পরিবহন, বোরাক, বন্ধু পরিবহন, বিকল্প, উইনার, বিকাশ পরিবহনসহ প্রায় সব পরিবহনে ভাড়া বেশি নিচ্ছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
গাজীপুর থেকে ভিআইপি ২৭ পরিবহনে এসেছেন আজিমপুরে পথযাত্রী জয়নাল মিয়া। এসময় তিনি বলেন, আগে ভাড়া দিতাম ৪৫ টাকা, এখন ভাড়া দিতে হচ্ছে ৭০ টাকা।
এলিফ্যান্ট রোডে কথা হয় ভিক্টর পরিবহনের যাত্রী রাজু আহমেদের সঙ্গে। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখান থেকে প্রেস ক্লাব যাব পাঁচ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ২০ টাকা।
শাহবাগ মোড়ে কথা হয় বোরাক পরিবহনের যাত্রী মো. রকির সঙ্গে। এসময় তিনি বলেন, আমি পল্টন মোড়ে নামব ৫ টাকার ভাড়া দিয়েছি ১৫ টাকা। এর থেকে রিকশায় গেলে ভালো হতো।
প্রেস ক্লাব মোড়ে কথা হয় শেওড়াপাড়া পরিবহনের যাত্রী আব্দুল গনি মিয়ার সঙ্গে। আব্দুল গনি মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমাদের মাথা কাটা হচ্ছে, ১০ টাকার ভাড়া ১৫-২০ টাকা দিতে হচ্ছে আবার কোনো কোনো সময় ৩০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বাঁচা কষ্ট হবে। বাসের লোকজনদের একটু ভাড়া কম দিলে তারা বিভিন্নভাবে খারাপ আচরণ করে। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছে। পরিবহন সেক্টরের কাছে জিম্মি আমাদের মতো সাধারণ মানুষ।
আজিমপুর মোড়ে বিহঙ্গ পরিবহনের যাত্রী হাবিব ওয়াহিদ বলেন, আগে মিরপুর থেকে আজিমপুরে আসতাম ২৫ টাকা দিয়ে এখন সেই ভাড়া হয়েছে ৩৫-৪০ টাকা। তিনি বলেন, বাসের এসব অত্যাচার দেখার কেউ নেই।
এদিকে নিউমার্কেট, আজিমপুর, বাসস্ট্যান্ড ঘুরে ও একাধিক বাসের চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা আগের থেকে ৫-১০ ভাড়া বেশি রাখছে। এজন্য যাত্রীদের সঙ্গে তাদের ঝগড়া ও হচ্ছে। তবে যাত্রীদের অভিযোগ বাসের চালক, হেলপার তাদের সঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য খারাপ ব্যবহার করছে।
শাহবাগ থেকে সাইনবোর্ডের এ পথের ভাড়া ছিল আগে ৩১ টাকা। লাব্বাইক পরিবহনের বাসে ভাড়া নেওয়া হতো ৪০ টাকা। ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে বাসের ভাড়া কিলোমিটারে ২ টাকা ১৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে আড়াই টাকা করেছে সরকার। এই নতুন ভাড়া কার্যকর হওয়ার পর শাহবাগ-সাইনবোর্ডের ভাড়া হয়েছে ৩৬ টাকা। কিন্তু নেওয়া হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এর আগেও বাড়তি নেওয়া হতো।
পল্টন মোড়ে কথা হয় খাজাবাবা পরিবহনের যাত্রী অমিত দত্তের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি ফার্মগেট থেকে এসেছি বাস ভাড়া আগে দিতাম ১৫ টাকা এখন এরা চাই ২৫ টাকা আমি বলছি টাকা গাছে ধরে। এরপর তাদের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয় পরে আমি আর ৫ টাকা দিয়ে বিদায় দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দেশের পরিবহন সেক্টরের সব স্থানে নতুন ভাড়ার চার্ট তৈরি করেছে পরিবহন মালিক সমিতি। কিছু কিছু জায়গায় এই চার্টের বাইরেও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
কেএম/এসএন