সংবাদ সম্মেলনে পরিবার এবং ১৩ সহপাঠী
'হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের প্রকৌশলীর মৃত্যু অর্থ আত্মসাত-পরিকল্পিত হত্যা'
গত ২৫ মে বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের প্রকৌশলী সুব্রত সাহার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে হত্যা মামলা করেন তার বড় ভাই স্বপন সাহা। এদিকে তার মৃত্যুকে অর্থ আত্মসাত ও পরিকল্পিতভাবে হত্যার দাবি করেছেন তাঁর পরিবার এবং ১৩ সহপাঠীরা। সোমবার (১৮ জুলাই) সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।
সুব্রত সাহার পরিবার ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ১৩ প্রকৌশলী সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ৫ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সংস্কারের জন্য ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু সংস্কারে এত টাকা খরচ হয়নি। বাজেটের বেঁচে যাওয়া অর্থ অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন হোটেলটির কয়েকজন কর্মকর্তা। এ জন্য তাঁরা প্রকৌশলী সুব্রত সাহাকে চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
গত ২৫ মে হোটেল চত্বর থেকে প্রকৌশলী সুব্রত সাহার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন হোটেল কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যুকে 'আত্মহত্যা' বলে দাবি করেছিল। পুলিশও প্রাথমিক তদন্ত শেষে আত্মহত্যা হতে পারে উল্লেখ করেছিল। সংবাদ সম্মেলনে সুব্রত সাহার বন্ধু প্রকৌশলী রিয়াসাত সুমন বলেন, ঘটনার দুই মাস পার হতে চলছে। এখনো মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। হোটেল কর্তৃপক্ষ একেকবার একেক বক্তব্য দিচ্ছে। কখনো তারা বলছে, হোটেলের ১১ তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে প্রকৌশলী সুব্রত সাহা আত্মহত্যা করেছেন।
তিনি বলেন, আবার কখনো দাবি করছে, সুব্রত মানসিক রোগী ছিলেন, তিনি নিয়মিত মানসিক চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কখনো তারা দাবি করছে, শেয়ারবাজারের লোকসানের কারণে সুব্রত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে হোটেল কর্তৃপক্ষের এসব দাবির কোনো সত্যতা মেলেনি।
রিয়াসাত সুমন দাবি করেন, 'হোটেল সংস্কারের জন্য ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। সুব্রত আমাদের বলেছিল, হোটেলের পরিকল্পনা ও প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আশ্রাফুর রহিম ও ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আজিজার রহমান মিলে এই অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেন। এ জন্য তাঁরা খরচের অতিরিক্ত বিল তৈরি করে তাতে সুব্রতকে স্বাক্ষর করতে চাপ দিচ্ছিলেন। প্রস্তাবে তিনি রাজি না হওয়ায় তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে'।
রিয়াসাত সুমন বলেন, প্রায় ২২ বছর ধরে সুব্রত এখানে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুই কর্মকর্তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রায় এক বছর ধরে তাঁকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করলেও সম্প্রতি তিনি হিসাব বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্ব পান। কর্মক্ষেত্রে হয়রানির কথা তিনি তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন।
প্রকৌশলী রিয়াসাত আরও বলেন, ওই দুই কর্মকর্তার সঙ্গে সুব্রত সাহার কাজ নিয়ে বিরোধ ছিল বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। হত্যা মামলা হওয়ার পর ওই দুই কর্মকর্তা কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। এখন তাঁরা আবার অফিস করছেন। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। দুই মাস পেরোলেও পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।
তিনি বলেন, এক মাস আগে তাঁর স্ত্রী নূপুর সাহার সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এরপর মামলার আর কোনো অগ্রগতি নেই। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সুব্রত সাহার স্ত্রী নূপুর সাহা বলেন, এ ঘটনার পর আমরা একটি মামলা করেছি। শুরুতে তদন্ত কর্মকর্তারা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করলেও এখন আর কোনো তেমন তদন্ত হচ্ছে না। এক মাস আগে ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন। এরপর তাদের সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি। বিষয়টি আমরা বুঝতে পারছি না!
নূপুর সাহা বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর আমি একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আর্থিক কষ্টে আছি। হোটেল কর্তৃপক্ষ আমাদের পাওনা টাকা এখনো বুঝিয়ে দেয়নি। এর সঠিক বিচার চাই আমরা।
কেএম/এএজেড