কোরবানির মাংস বিক্রি হচ্ছে নগরীর রাস্তায়
নগরীর বিভিন্ন রাস্তার ধারে কোরবানির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতা হচ্ছেন প্রান্তিক লোকজন। আর ক্রেতা হচ্ছেন নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। যারা এই ঈদে কোরবানি দিতে পারেনি। প্রান্তিক লোকজন বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে এসব মাংস সংগ্রহ করে রাস্তার ধারে বসে বিক্রি করছেন।
রবিবার (১০ জুলাই) বিকাল থেকে নগরীর খিলগাঁও, তালতলা, বাড্ডা, রামপুরাসহ প্রগতি সরণির বিভিন্ন স্থানে কোরবানির মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, পথচারীদের অনেকেই এসব মাংস কিনছেন। কেউ কেউ আবার মাংস কিনে রেখে জড়ো করে আবার একটু বেশি দামে বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকা দরে। তবে দরকষাকষি করে অনেকে কম দামে কিনছেন।
ফরিদপুরের নজরুল ইসলাম। রিকশাভ্যানে ফেরি করে সারা বছর তৈরি পোশাকের ব্যবসা করেন। ঈদকে কেন্দ্র করে মৌসুমি কসাইয়ের কাজ করেছেন। রবিবার বিকালে রাজধানীর পশ্চিম রামপুরায় কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দেশের বাড়ি ফরিদপুর থেকে লোক এনেছিলাম, এখানে চারটি গরু কাটার অর্ডার পেয়েছিলাম, কিন্তু দুইটা গরু তারা কিনেই নাই। কিন্তু ওই লোকগুলারে তো টাকা দিয়ে বিদায় দেওয়া লাগবো। তাই এখন মাংস কিনে বিক্রি করছি, যা লাভ হয় তা দিয়ে তাদের বিদায় দিতে পারব। ৫০০-৫৫০ করে কিনি, ৬০০-৬৫০ করে বিক্রি করছি। আবার কেনা মাংস থেকে চর্বি বাদ যাবে।
গাইবান্ধার ওলি আহম্মদ ঢাকা শহরে রিকশা চালান। তিনি ২ কেজির মতো মাংস ৯০০ টাকায় নজরুলের কাছে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, এখন বাড়ি যাব, তাই বিক্রি করে দিচ্ছি।
নজরুল আরেক জনের কাছ থেকেও আড়াই কেজি পরিমাণ মাংস ১ হাজার ৩৪০ টাকায় কিনলেন। তুলনামূলক কম দামে কেনার প্রশ্নে তিনি বলেন, হাড্ডি বেশি হলে বুঝে কিনতে হয় তো।
বরিশালের মোহাম্মদ রুবেল আসবাবপত্রের দোকানে কাজ করেন। তিনি বলেন, রাতে দোকান দেরিতে বন্ধ হয়েছে, তাই দিনে কসাইয়ের কাজ মেলাতে পারেননি। এখন বিকাল থেকে মাংস কেনাবেচা করছেন। আগামীকালও কিছু বেচাকেনা হবে আশা করছেন। কারণ আগামীকালও কিছু কোরবানি হবে। পশ্চিম হাজিপাড়ায় জনতা ব্যাংকের উল্টো পাশে ডি আই টি রোডে কথা হয় তার সঙ্গে।
মাগুরার মাসুদ আলম বলেন, সারা বছর দেশে গরু বানাই (কসাইয়ের কাজ করেন)। ঢাকায় ৮টা গরু কাটার অর্ডার পেয়েছি, হাজারে ১০০ টাকা করে কন্ট্রাক্টে কাজ করেছি। কাজ শেষে তাদের কেউ বাড়তি মাংস দিয়েছে, কেউ মাথাটা দিয়ে দিয়েছে। মাথার মাংসের দুটি ভাগ দেখিয়ে বলেন দেড় কেজির মতো করে আছে, ৩০০ টাকা করে প্রতি ভাগ বিক্রি করব। পরে অবশ্য সাড়ে চারশ টাকায় সেগুলো বিক্রি করেন তিনি।
বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে পাওয়া মাংসও বিক্রি করতে রাস্তার পাশে ভাগা করে বসেছেন কেউ কেউ। তাদের কেউ বলছেন রাখার মতো ফ্রিজ নাই তাই বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার কেউ গ্রামের বাড়িতে যাবেন তাই বিক্রি করে দিচ্ছেন।
যারা মাংস কিনে জড়ো করছেন এবং বিক্রি করছেন এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, জড়ো করা মাংস থেকে গেলে রেস্টুরেন্টে বিক্রি করে দেবেন।
তবে রাজধানীর রামপুরা ও মালিবাগ রেলগেট এলাকায় দুই-তিন জনকে দেখা গেছে, যারা এমনিতেই গরু জবাই করে স্বাভাবিক সময়ের মতো মাংস বিক্রি করেছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, মাংসের সব দোকান বন্ধ। কিন্তু অনেকে কোরবানি দেননি, আবার কেউ গ্রামে কোরবানি দিয়েছেন, কিন্তু পুরো পরিবারের গ্রামে যাওয়া হয়নি, তারাও মাংস কিনতে আসেন। তাই তারা দোকান খুলে বসেছেন।
এমএ/এনএইচবি/এসজি/