গরিবের হক চামড়ার টাকার সিংহভাগ যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের পকেটে
ঈদুল আজহার প্রথম দিন শেষ হলো। ঈদুল আজহার মূল তাৎপর্য হচ্ছে পছন্দের পশুকে কোরবানি দেওয়া। সারা দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে সামর্থ্যবানরা গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা যে যার মতো পছন্দের পশুকে কোরবানি করেছেন। কোরবানি শেষে এখন চলছে পশুর চামড়ার বাণিজ্য। কোরবানি পশুর কাঁচা চামড়া নিয়ে চলছে অসম বাণিজ্য। সাধারণত কোরবানি পশুর চামড়ার মূল্যটা পেয়ে থাকেন মাদ্রাসার এতিমরা।
গত কয়েক বছরে চামড়ার বাজার এতটাই নিম্নমুখী হয়েছে যে চামড়া বিক্রির প্রবণতাই কমে গেছে। এখন কেউ পশু কোরবানি করলে চামড়া আর বিক্রি করেন না। মাদ্রাসার ছাত্র বা গরিব কাউকে দিয়ে দেন। কেননা চামড়া দাম এতটাই কম যে সেটি বহন করে বিক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছানোর ধৈর্য্য থাকে না।
এবারও তাই ঘটেছে। রাজধানীর কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বড় বাজার পুরান ঢাকার পোস্তায় দেখা গেছে থরে থরে কাঁচা চামড়া আসছে। ফুট ইঞ্চির বালাই নেই, চোখের আন্দাজে আড়তদাররা চামড়া কিনে লবণ মেশাচ্ছেন। শুধু আড়তে নয়, রাস্তার ধারে শহরের অলিগলিতে বসেছেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া নিয়ে আজিমপুর, পুরান ঢাকার পোস্তায় ছুটছেন মাদ্রাসার ছাত্ররা। পোস্তায় যতগুলো ট্রাক ভর্তি চামড়া দেখা গেছে সেটার অধিংকাংশই কোনো না কোনো মাদ্রাসার ছাত্র বা শিক্ষকরা নিয়ে গেছেন।
সরকারি দামে কোথাও চামড়া কিনতে দেখা যায়নি। আজিমপুর আলিম উদ্দিন মাঠের পাশেই চামড়া কেনাবেচা চলছে। সেখানে গিয়ে একজন চামড়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ঈদের তুলনায় এবারের ঈদে কোরবানি পশুর চামড়ার দাম একটু বাড়তি।
কামাল হোসেন নামে ওই ব্যবসায়ী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এবার পশু কোরবানি হয়েছে কম। গত বছর এই সময় পর্যন্ত (বিকাল সাড়ে ৫টা) ২-৩ হাজার চামড়া কিনেছি। এবার এখনো হাজার পূর্ণ করতে পারিনি। শুধু আমি না এখানে যাদের দেখছেন কেউ ওইভাবে চামড়া সংগ্রহ করতে পারেনি। এজন্য দামও একটু বেশি।
তবে তার কথার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আরেকজন ট্রাক ভর্তি চামড়া নিয়ে হাজির হয়েছেন। তিনি ৯০টি গরুর চামড়া নিয়ে এসেছেন। মাদ্রাসার এক শিক্ষক ট্রাক ভর্তি এই চামড়া নিয়ে এসেছেন বিনামূল্যে। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, চামড়া প্রতি সাড়ে ৪০০ টাকা দিতে চাচ্ছে। এই দামের চামড়া বিক্রি করলে হাজিরাও উঠবে না। গাড়ি ভাড়া দিয়ে চামড়া নিয়ে এসে এভাবে ফেলে দেওয়া, ফেরত দেওয়া হবে বুঝতে পারিনি। সরকারি দামে কেউ নিচ্ছে না।
পরে কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলার আগে তার টালি খাতার দিকে চোখ বুলাতেই দেখি তিনি চামড়ার মূল্য সাড়ে ৭০০ টাকা লিখে রাখছেন। অথচ যারা সরাসরি কোরবানি দাতার কাছ থেকে নিয়ে এসেছেন তারা সেই মূল্যটা পাচ্ছেন না। গরুর চামড়া আকার ভেদে ৬০০-৭০০ টাকা বলা হলেও কিনছে ৪৫০-৫০০ টাকায়। অর্থাৎ ব্যবসায়ীদের পকেটেই যাচ্ছে গরিবের হক চামড়ার সিংহভাগ টাকা।
চামড়ার প্রকৃত মূল্য যে এতিম বা মাদ্রাসার ছাত্রদের কল্যাণে যাওয়ার কথা সেই মূল্য তারা পাচ্ছেন না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। আবু সায়েম নামে মাদ্রাসার এক শিক্ষক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, অনেক জায়গা থেকে আমরা ফ্রিতেই চামড়া পাই। আবার কিছু কিনে আনতে হয়। গাড়ি ভাড়া দিয়ে পোস্তায় আনার পর যে দাম বলে সেই দামে বিক্রি করলে কিছু থাকে না। সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু সেই দাম কতটুক মানা হচ্ছে তা মনিটর করবে কে? কোথাও তো মনিটরিং ব্যবস্থা নেই। এই কারণে যে যেভাবে পারছে গরিবদের ঠকাচ্ছে।
এসএম/এসজি/