ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র ছায়া সংসদ অনুষ্ঠিত
অবৈধ গ্যাস সংযোগে প্রভাবশালী জড়িত : পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান
জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দিয়ে সরকার সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সচল রাখতে চায়। ভর্তুকি দীর্ঘমেয়াদি কোন সমাধান নয়, তবে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করার প্রয়োজনে তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। বাংলাদেশে জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত নয়। তবে এ মুহুর্তে বড় ধরনের কোন শংকা নেই। স্বদিচ্ছা থাকলে জ্বালানি খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের ওপর তেমন চাপ তৈরি না হলেও জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। দেশের কল্যাণে মূল্য বৃদ্ধির এই চাপ সহ্য করতে হবে।
দুর্নীতিবাজ শিল্পপতিদের গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা খুবই চ্যালেঞ্জের কাজ। এ দেশের উচ্চ বিত্তরাই দুর্নীতির সাথে বেশি জড়িত। আমার সময়ে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবৈধ গ্যাসের লাইন বন্ধ করতে গিয়ে একজন জেনারেল ম্যানেজারকে প্রতিষ্ঠানের লোকদের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। অবৈধ গ্যাস সংযোগ বৈধ করার সুযোগ দিলে দেখা যাবে দেশে প্রায় ৫ লাখ অবৈধ সংযোগ বৈধ করার আবেদন করবে। পেট্রোল পাম্প থেকে যানবাহনে জ্বালানি দেয়ার সময় সুকৌশলে ২০ শতাংশ কম দেয়। গাড়ীতে ১০০ টাকার গ্যাস কিনলে ৮০ টাকার গ্যাস পাওয়া যায়, বাকিটা বাতাস ঢুকিয়ে দেয়।
জ্বালানি খাতে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হলে তেল-গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া, সিস্টেম লস হ্রাস করা এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুক্রবার (১০ জুন) এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, করোনা পরবর্তী বিশ্ববাজার পরিস্থিতিতে জ্বালানি মূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণ উল্লেখ করে ভর্তুকি কমানোর লক্ষ্যে সরকার তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। তবে করোনার ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে জনজীবন যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জর্জরিত ঠিক সে সময় গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি কতখানি যৌক্তিক তা নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বাংলাদেশে মাসে প্রায় ৬ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চুরি হচ্ছে। যার আমদানি মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। গ্যাস চুরির পরিমাণ এক তৃতীয়াংশ কমানো গেলেও স্পট মার্কেট থেকে এত টাকা দিয়ে এলএনজি কিনতে হতো না। চুরিকৃত এই গ্যাসের দায় সিস্টেম লসের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মান অনুসারে সিস্টেম লসের পরিমাণ ০.২০ থেকে ০.৩০ শতাংশ থাকার কথা। কিন্তু আমাদের গ্যাসে সিস্টেম লস দেখানো হচ্ছে ২ শতাংশেরও বেশি।
চলতি বাজেটে গ্যাসের ভর্তুকি পূরণে পেট্রোবাংলা সরকারের কাছে ৪০ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা চেয়েছে। সে কারণে সরকারকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করতে হয়েছে। দেশে ৫১ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় গ্যাস পুড়িয়ে। ফলে গ্যাসের দাম বাড়াতে আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অথচ গ্যাস ও বিদ্যুতের উৎপাদন, বণ্টন ও সঞ্চালনে সুশাসন তৈরি করা গেলে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রয়োজন হতো না। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। বিপিসি ভর্তুকি প্রদান ও মুনাফা অর্জনের বিষয়টি কখনো সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে না। জনগণের তথ্য প্রদানে বিপিসিকে আরো উদার হতে হবে। জ্বালানি স্বনির্ভরতা অর্জনে নেতৃত্বের ব্যর্থতা রয়েছে।
সর্বশেষ গত ৫ জুন বিইআরসি পুনরায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে। বিইআরসির গ্যাসের এই মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ ভোক্তাসহ শিল্প কলকারখানার মালিকদের অস্বস্তিতে ফেলেছে। বাংলাদেশের গ্যাস উৎপাদনকারী এবং বিতরণকারী সংস্থাগুলো মধ্যে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। ছাতকে পুনরায় কূপ খনন করে গ্যাস উত্তোলন ও ভোলায় উৎপাদন বাড়িয়ে মেইন গ্রীডে সঞ্চালন করতে পারলে গ্যাসের ব্যবহারের ওপর কিছুটা চাপ কমবে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, জনবল ও দক্ষতা বাড়িয়ে উপযুক্ত জরিপের মাধ্যমে উৎপাদনক্ষম গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার এখন সময়ের দাবী। তা না হলে মজুতকৃত মাত্র ২৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার শেষ হয়ে গেলে আমরা আরো সংকটে পড়বো।
প্রতিযোগিতায় সমান নম্বর পেয়ে যৌথভাবে বিজয়ী হয় ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ ও ঢাকার সরকারি বাঙলা কলেজ। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ছায়া সংসদের বিষয় ছিল- বর্তমান বাস্তবতায় তেল-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি যৌক্তিক। ছায়া সংসদে মক স্পিকার হিসেবে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক সবুজ ইউনুস, সাংবাদিক ফজলে রাব্বি ও সাংবাদিক মোজাহেরুল হক রুমেন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
সূত্র: মো. আবুল বাশার, কো-অর্ডিনেটর, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি
এএজেড